কালের সাক্ষী হয়ে আছে পবার তিন গম্বুজ বিশিষ্ট ঐতিহাসিক শাহী জামে মসজিদ। উপজেলার নওহাটা পৌরসভার বাগধানী কাচারীপাড়ায় ২৩০ বছর পুরোনো মসজিদটি ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে। যা এখন পর্যন্ত রাজশাহী জেলার যে কটি প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে তার মধ্যে এটি একটি।

স্থানীয়ভাবে কথিত রয়েছে—এক রাতে জিনেরা এই মসজিদটি তৈরি করেছিল। তবে বিষয়টি সঠিক নয় বলে জানান মসজিদের মুসল্লিরা। তারা বলছেন, এই মসজিদটি মানুষের তৈরি। তৈরির সময় থেকে মুসল্লিরা এখানে নামাজ আদায় করে আসছেন। যা আজ পর্যন্ত চলমান রয়েছে। তিন গম্বুজ বিশিষ্ট ঐতিহাসিক শাহী জামে মসজিদটি আকারে ছোট। তাই একসঙ্গে অনেক মুসল্লির নামাজের ব্যবস্থার স্বার্থে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। তবে সম্প্রসারণ হলেও আগের আদলেই রয়ে গেছে মসজিদটি।

জানা গেছে, মসজিদের পশ্চিমে রাজশাহী-তানোর সড়ক। আর পূর্বে বারনই নদী। মূলত বারনই নদীর ধারে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল। একটা সময় বারনই নদীই একমাত্র পথ ছিল বাগধানী গ্রামের। তখন এই মসজিদের পাশে ঘাট ছিল। নদী তীরের এই ঘাট ঘেঁষে সপ্তাহে দুই দিন করে হাটও বসতো। এটাই ছিল পবার সবচেয়ে পুরোনো হাট। এখন সেই জমজমাট অবস্থা নেই। তবে শুক্র ও মঙ্গলবার এখনও হাট বসে সেখানে।

বর্তমানে এ ছাড়া উন্নত যোগাযোগের জন্য নদীর ওপরে তৈরি করা হয়েছে সংযোগ সেতুও। চারপাশ সবুজে ঘেরা এমন সতেজ-শ্যামল প্রান্তরে প্রাচীন আমলের দৃষ্টি নন্দন তিন গম্বুজ মসজিদটি আজও দাঁড়িয়ে আছে মাথা উঁচু করে।

ঐতিহ্যবাহী মসজিদটির দৃষ্টিনন্দন নির্মাণশৈলী যে কোনো পর্যটককে বিমোহিত করবে। মসজিদটির ভেতরে ঢুকতেই সদর দরজার শিলা লিপিতে চোখে পড়বে ফারসি হরফের লেখা। যেখানে কালো অক্ষরে লেখা আছে মুন্সি মোহাম্মদ এনায়েতুল্লাহ বাংলা ১২০০ সালে এ মসজিদটি নির্মাণ করেছেন। যারা নান্দনিক সৌন্দর্যের খোঁজে দেশের আনাচে-কানাচে চষে বেড়ান, তাদের পিপাসা মেটাবে এই মসজিদ। মসজিদটির দৈর্ঘ্য ৮০ ফুট এবং প্রস্থ ৪০ ফুট। আয়তন হচ্ছে ৩ হাজার ২০০ বর্গফুট।

মসজিদটির চার কোনায় নকশা খচিত গম্বুজ আকৃতির মনোরম পিলার রয়েছে। মসজিদটিতে তিনটি মেহেরাব, তিনটি দরজা, দুটি জানালা ও একটি মিনার রয়েছে। এ ছাড়া মসজিদের চারপাশের দেয়ালের বাইরে ও ভেতরে চিনামাটি খচিত নকশা রয়েছে। যা এক পলকেই ভালো লাগবে পর্যটকদের।

রাকিবুল ইসলাম নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, মনোবাসনা পূরণের জন্য এই মসজিদে দূরদূরান্ত থেকে লোকজন আসেন। পুরোনো আমলের এই মসজিদে তারা নামাজ আদায় করেন। এজন্য জুম্মার দিন মুসল্লিদের বাড়তি ভিড় দেখা যায় মসজিদে।

স্থানীয় সাইফুল ইসলাম বলেন, ১৯৯০ সালে ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয় মসজিদটি। ২০১৬ সালে তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সংস্কারের উদ্যোগ নেন। তারপরে কিছুটা সংস্কার হয়ে বর্তমান অবস্থায় রয়েছে। তবে মসজিদ ও তার পাশের কাছারি ঘরের ধ্বংসাবশেষ এখনো কালের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে। সংরক্ষণ ও সংস্কার করা হলে মসজিদটিকে ঘিরে এই এলাকায় পর্যটনকেন্দ্র গড়ে উঠবে।

মসজিদের মুয়াজ্জিন লুৎফার রহমান বলেন, কেউ কেউ বলত জিনের তৈরি। এক রাতে তৈরি হয়েছে মসজিদ। আসলে কেউ সঠিকভাবে বলতে পারে না মসজিদের ইতিহাস। মসজিদের নামে কোনো জমি নেই। ফলে বিভিন্ন সময় মসজিদের সংস্কারের কাজগুলো হয় মুসল্লিদের দানের টাকায়।

তিনি আরও বলেন, মসজিদের পুরো রং ছিল মাটির রঙে। কোনো রং করা ছিল না। পরবর্তীতে সুবজ রং করা হয়েছে। যেহেতু এলাকায় মুসল্লি বেড়েছে তাই সংগত কারণেই মসজিদ বড় করতে হয়েছে। মূল মসজিদ ঠিক রেখে সংস্কারের কাজ করা হয়েছে।

পবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আরাফাত আমান আজিজের মুঠোফোনে কলা করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। তাই এ বিষয়ে তার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

শাহিনুল আশিক/এএমকে