পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ প্রফেসর শিবজিত নাগ বলেছেন, পাবনা প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি একেএম আজিজুল হক ও কার্যনির্বাহী সদস্য আব্দুল মজিদ দুদু অনুসন্ধানী, প্রথিতযশা, সৎ ও নির্ভীক সাংবাদিক ছিলেন। তারা পেশাদারিত্বের সঙ্গে মানুষের কল্যাণে সাংবাদিকতা করে গেছেন।

শনিবার (১২ এপ্রিল) রাতে আজিজুল হকের ৫৫তম ও আব্দুল মজিদ দুদুর ১০ম মৃত্যুবার্ষিকী স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিলে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। 

পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি আখতারুজ্জামান আখতারের সভাপতিত্বে ও সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক ইয়াদ আলী মৃধা পাভেল সঞ্চালনা করেন। সভার শুরুতে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন, পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক জহুরুল ইসলাম। 

তাদের জীবনী তুলে ধরে শিবজিত নাগ বলেন, তাদের লেখনির মাধ্যমে জেলায় অনেক কিছু পরিবর্তন ও উন্নয়ন হয়েছিল। বহু সাংবাদিক তৈরি করে গেছেন তারা। তাদের অবদান ভোলার মতো নয়। তাদের ভালো আচার-আচরণের মাধ্যমেই মানুষের মনিকোঠায় চীরদিন বেঁচে থাকবেন। এদের মত কীর্তিমান সাংবাদিকের এখন বড়ই অভাব। 

তিনি আরও বলেন, একাধিক মিডিয়ায় কাজ করলেও অত্যন্ত সহজ সরল জীবনযাপন করে গেছেন। অন্যায়ের সঙ্গে কোনদিন আপস করেননি। পাবনার বুকে তাদের মতো সাংবাদিকের এখন বড়ই অভাব। তাদের মতো সাংবাদিক খুব প্রয়োজন। যাতে পাবনা জেলার সঠিক বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ তুলে আনতে পারেন। প্রেসক্লাব নিয়ে গর্ব করলে তাদের দুইজনকে নিয়ে করা যায়। পরিশেষে তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন।

এসময় আরও বক্তব্য দেন, পাবনা সংবাদপত্র পরিষদের সভাপতি ও পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সম্পাদক আব্দুল মতিন খান, পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি এবিএম ফজলুর রহমান, মরহুম আজিজুল হকের ছেলে নাজমুল হক পিপলু, মরহুম আব্দুল মজিদ দুদুর ফুফাতো ভাই ও পাবনা জেলা জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি এসএম সোহেল, পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আখিনূর ইসলাম রেমন, মরহুম আজিজুল হকের নাতি আগা মোহাম্মদ মঞ্জুরুল ইসলাম, একুশে টেলিভিশনের স্টাফ রিপোর্টার রাজিউর রহমান রুমী, পাবনা প্রেসক্লাবের সহসভাপতি এসএম আলাউদ্দিন, পাবনা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক কাজী মাহবুব মোর্শেদ বাবলা। এছাড়া পাবনায় কর্মরত বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকরা ও মরহুমদের আত্মীয়-স্বজন উপস্থিত ছিলেন। 

একেএম আজিজুল হক ১৯১৯ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৭০ সালে ১২ এপ্রিল হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণ করেন। তিনি ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন সিনেট সদস্য ও পাবনা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক পাক হিতৈষীর সম্পাদক ও পূর্ব পাকিস্তান মফস্বল সাংবাদিক সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি।

তিনি ১৯৪১ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রথম শ্রেণিতে বিএসসি পাস করেন। তিনি শিল্প-সাহিত্য ও সংস্কৃতিপ্রেমী ছিলেন। নারী শিক্ষা ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন। ১৯৬৫ সালে পাবনার মহিলা কলেজ প্রতিষ্ঠায় তার অগ্রণী ভূমিকা ছিল। ২০১২ সাল থেকে পাবনা প্রেসক্লাবে একেএম আজিজুল হক স্মৃতি সাংবাদিকতা পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে।

আব্দুল মজিদ দুদু জন্মগ্রহণ করেন ১৯৬৩ সালের ৪ এপ্রিল পাবনা সদরের ভাঁড়ারা ইউনিয়নের চরবভানীপুর গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারে। ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল স্ট্রোকজনিত কারণে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। এর আগে তিনি পর্যায়ক্রমে দৈনিক সংগ্রাম, দৈনিক নয়া দিগন্ত, বাংলাদেশ টেলিভিশন, দিগন্ত টেলিভিশন ও ইউ এন বি এর পাবনা প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতেন। পাবনার বিভিন্ন পেশাজীবী মানুষের কাছে তিনি সদা হাস্যোজ্জ্বল ও প্রিয়ভাজন মানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন। 

রাকিব হাসনাত/আরকে