ফরিদপুরে ফারাবি এক্সপ্রেস নামে একটি বাস উল্টে খাদে পড়ে ৭ জন নিহতের ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চালকের বেপরোয়া গতিতে নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালানোসহ দুর্ঘটনার পাঁচ কারণ। পাশাপাশি আগামীতে দুর্ঘটনা রোধে ১৪টি সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে তদন্ত কমিটির এ প্রতিবেদন পাওয়া গেছে। এর আগে গতকাল মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লার কাছে প্রতিবেদন জমা দেন তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক ফরিদপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মিন্টু বিশ্বাস। 

প্রতিবেদনে দুর্ঘটনার সম্ভাব্য পাঁচটি কারণ বলা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে- চালকের বেপরোয়া গতিতে নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালানো, ঝুঁকিপূর্ণ ওভারটেকিং, ওভারটেকিং আইন অমান্য করা এবং সড়কে এ বিষয়ে সতর্কতামূলক সাইনবোর্ড না থাকা, ফিটনেস এবং ট্যাক্সটোকেন মেয়াদ উত্তীর্ণ অবস্থায় সড়কে চলাচল করা এবং দুর্ঘটনাকবলিত স্থানের রাস্তাটি পার্শ্ব সড়ক অংশে ঝুঁকিপূর্ণ সোল্ডার ড্রপ থাকা।

তদন্ত কমিটি বাসটির চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্সের কোনো তথ্য পায়নি বলে প্রতিবেদনে বলা হয়। তাদের পর্যবেক্ষণে বলা হয়- মহাসড়কের ফরিদপুর-ভাঙ্গা অংশে অসংখ্য রেজিস্ট্রেশনবিহীন, অবৈধ ইজিবাইক, নসিমন, করিমন, ভটভটি চলাচল করছে। এছাড়া রাস্তাটি দুই লেন বিশিষ্ট হওয়ায় সব ধরনের ও বিভিন্ন গতির গাড়ি চলাচলে প্রতিবন্ধকতার শিকার হয়, যা গাড়ি চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়। 

গত মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর-বরিশাল মহাসড়কে ফরিদপুর সদরের বাখুন্ডা এলাকার শরিফ জুটমিলের সামনে মুকসুদপুর থেকে ফরিদপুরগামী ফারাবি এক্সপ্রেস নামের বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে খাদে পড়ে গেলে ৭ জন নিহত ও ৩২  জন আহত হন। 

ঘটনার পর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাসকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন এবং তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়। 

কমিটিতে অন্যদের মধ্যে ছিলেন- অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আজমীর হোসেন, হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর রিজিয়নের সহকারী পুলিশ সুপার মারুফ হোসেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী খালিদ সাইফুল্লাহ, বুয়েটের এআরআই বিভাগের প্রভাষক ড. নাজমুল হক, ফরিদপুর ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান এবং বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন। 

তদন্ত কমিটি দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের পাশাপাশি দুর্ঘটনা নিরসনে ১৪টি সুপারিশ করেছে।
সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে- মহাসড়কে ফিটনেস ছাড়া গাড়ি চলাচল না করা, রুট পারমিট ব্যতীত কোনো গাড়ি চলাচল না করা, বিকল্প চালক রেখে টানা ৫ ঘণ্টার বেশি গাড়ি না চালানো, এক্ষেত্রে বিকল্প চালকের ব্যবস্থা রাখা, প্রতিটি গাড়িতে অগ্নিনির্বাপকের ব্যবস্থা রাখা, বৈধ ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি না চালানো, থ্রি-হুইলার এবং ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক চলাচল নিষিদ্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকায় রাস্তার পাশে ট্রাফিক সাইন প্রদর্শন, পর্যাপ্ত সিগন্যাল, সিসি ক্যামেরা স্থাপন, সকল যানবাহনে গতি নিয়ন্ত্রক যন্ত্র বসানো, ঝুঁকিপূর্ণ সোল্ডার ড্রপ মেরামত, অনুমোদনহীন পার্শ্বরাস্তা সংযোগ না দেওয়া এবং রাইট অফ ওয়ের বাইরে বৈদুতিক খুঁটি স্থাপন করা।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. কামরুল হাসান মোল্লা বলেন, বিগত দিনের দুর্ঘটনায় তদন্ত কমিটির সুপারিশ এবং এ ঘটনায় পাওয়া সুপারিশগুলো নিয়ে বাস মালিক, শ্রমিক, সড়ক বিভাগ, বিআরটিএসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে দ্রুত সভা করা হবে। সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য সভায় প্রত্যেক বিভাগকে আলাদা করে দায়িত্ব বণ্টন করে দেওয়া হবে। এছাড়া সুপারিশগুলো ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছেও পাঠানো হবে।

এ ঘটনায় সড়ক পরিবহন আইনে করা মামলায় বাসচালক সুমন গাজী কারাগারে রয়েছেন। 

জহির হোসেন/আরএআর