নানামুখী সংকট কাটিয়েও জাতীয় আইনগত সহায়তার আওতায় ময়মনসিংহ জেলা লিগ্যাল এইড গত এক বছরে ১৫৪টি অভিযোগ নিষ্পত্তি করেছেন। ফলে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মধ্য দিয়ে কমেছে থানা-আদালতে মামলার চাপ। এতে সংশ্লিষ্ট পক্ষদ্বয়ে সরকারি আইনি সেবায় বাড়ছে আস্থা।

রোববার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে জেলা লিগ্যাল এইডের বিচারক (সিনিয়র সহকারী জজ) সুদীপ্ত তালুকদার জাতীয় আইনগত এই সেবা কার্যক্রমের গত এক বছরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে ঢাকা পোস্টকে এই তথ্য নিশ্চিত করেন।  

তিনি বলেন, আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার পেতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণের মধ্যে আইনগত সহায়তা প্রদানের জন্য সরকারিভাবে লিগ্যাল এইড পরিচালনা করছে সরকার। এতে আপোষযোগ্য দেওয়ানি, ফৌজদারি, পারিবারিক কলহ, জমি বিরোধ, বিবাহ বিচ্ছেদ, দাম্পত্য কলহসহ নানা ধরনের অভিযোগ বিকল্প নিষ্পত্তির লক্ষ্যে প্রদান করা হচ্ছে আইগনত সেবা। এই সেবা কার্যক্রমের আওতায় গত এক বছরে ময়মনসিংহ লিগ্যাল এইডে ১ হাজার ৬৮৯টি অভিযোগের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। ৮২৫টি মামলায় সরকারিভাবে আইনজীবী নিয়োগ দিয়ে করা হয়েছে ন্যায় বিচারের ব্যবস্থা। সেইসঙ্গে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য বছরজুড়ে ৮২৮টি আবেদনের শুনানি করে সফলভাবে দুই পক্ষের আন্তরিক আলোচনায় ১৫৪টি নিষ্পত্তি করা হয়। ফলে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে আদায় হয়েছে ৮৬ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। 

জেলা লিগ্যাল এইডের পেশকার মো. রমজান আলী বলেন, গত এক বছরে বিচার প্রার্থীদের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১০৫টি মামলায় কারাগারে থাকা অসহায়, বিপদগ্রস্ত বন্দি আসামিদের জামিনের জন্য সরকারিভাবে বিনা খরচে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে জেলা লিগ্যাল এইডের এই আইনগত সেবায় যুক্ত রয়েছেন ১১৭ জন আইনজীবী। এর মধ্যে ৯৬ জন পুরুষ এবং ২১ জন নারী আইনজীবী রয়েছেন।

সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ জেলার ১৩টি উপজেলাজুড়ে লিগ্যাল এইড বিনা খরচে নিয়মিত সেবা দিয়ে আসলেও প্রতিষ্ঠানটি নানা সংকটে নিমজ্জিত। এর মধ্যে অন্যতম জনবল, পরিবহন ও আর্থিক সংকট উল্লেখযোগ্য। ফলে সরকারি সেবা কার্যক্রমও হচ্ছে ব্যাহত।

জেলা লিগ্যাল এইডের মুদ্রাক্ষরিক পদে কর্মরত ঝুমা বেগম বলেন, বর্তমানে একজন বিচারকের অধীনে আমিসহ মোট চারজন কর্মচারী লিগ্যাল এইডে কাজ করছি। যা সেবাপ্রার্থীদের চাহিদার তুলনায় অনেকটাই অপ্রতুল। এজন্য চাহিদা অনুযায়ী পর্যাপ্ত সেবা নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, হিসাব সংরক্ষণ কর্মকর্তাসহ আরও বেশ কয়েকটি জনবল অতি আবশ্যক। 

জানতে চাইলে জেলা লিগ্যাল এইডের বিচারক (সিনিয়র সহকারী জজ) সুদীপ্ত তালুকদার স্বীকার করেন প্রতিষ্ঠানটির নানা সংকটের কথা। তিনি বলেন, চেষ্টা করছি সেবাপ্রার্থীদের সাধ্যমতো সেবা নিশ্চিত করতে। তবে অল্প জনবল, পরিবহন শূন্যতা ও আর্থিক সংকটের কারণে তা শতভাগ হয়ে উঠছে না। কারণ, অনেক ক্ষেত্রে অভিযোগ সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে মাঠ পর্যায়ে যেতে পারলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা সহজ হয়। কিন্তু সেটি সম্ভব হচ্ছে না পরিবহন সংকটের কারণে।

তারপরও সেবাপ্রার্থীদের প্রত্যাশা পূরণে লিগ্যাল এইড কাজ করছে জানিয়ে এই বিচারক আরও বলেন, সরকারিভাবে বিনামূল্যে আইনগত সেবা দেওয়া হচ্ছে লিগ্যাল এইডে। এই বিষয়টি নিয়ে আরও ব্যাপকভাবে প্রচার ও প্রচারণার দরকার। এতে বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে দিনে দিনে কমে আসবে মামলার সংখ্যা। কমবে কলহ বিচ্ছেদও। 

মো. আমান উল্লাহ আকন্দ/এএমকে