রাজবাড়ীতে অজানা রোগে মারা যাচ্ছে হাঁস-মুরগি, নমুনা সংগ্রহ
বাংলাদেশে ফের হাঁস-মুরগির দেহে এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা বার্ড ফ্লু রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। রাজবাড়ীতে গত কয়েক মাসে অজানা রোগে প্রান্তিক খামারি ও একটি বাণিজ্যিক পোলট্রি খামারের প্রায় চার হাজার মুরগি মারা গেছে। তবে কী কারণে মারা গেছে তা এখন পর্যন্ত নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নমুনা নিয়ে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আতঙ্কিত না হয়ে খামারিদের সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর।
রোববার (২৭ এপ্রিল) বিকেলে কাজীকান্দা ব্যাংক পাড়া এলাকায় সরেজমিনে পরিদর্শনে যান সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. উমর ফারুক। তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করে অসুস্থ হাঁস-মুরগিগুলোকে দেখেন এবং খামারিদের সাথে কথা বলে নমুনা সংগ্রহ করেন।
বিজ্ঞাপন
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১-২ মাস ধরে রাজবাড়ী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাজীকান্দা ব্যাংকপাড়া, সদর উপজেলার দাদশী ইউনিয়নের চককেষ্টপুর, সদর উপজেলার বাগমারা এলাকায় অসংখ্য মুরগি মারা গেছে। ব্যাংকপাড়া এলাকার জালাল উদ্দীন, হোসেন, বাচ্চু, মান্নান, আবুল, জিন্নাহ, রফিকসহ আরও কয়েকজনের বাড়ির হাঁস-মুরগি এক এক করে সব মারা গেছে। এছাড়াও সদর উপজেলার বাগমারা এলাকার একটি হ্যাচারির প্রায় ৪ হাজার মুরগি মারা গেছে। এছাড়াও স্থানীয়রা ব্যাংক পাড়া এলাকার মাঠে ঘুঘু, বকসহ অন্যান্য পাখি মরে পড়ে থাকতে দেখেছে।
রাজবাড়ী পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের কাজীকান্দা ব্যাংক পাড়া এলাকার বাসিন্দা মো. জালাল উদ্দীন বলেন, গত দেড় মাসে আমার প্রায় ৮০টি মুরগি মারা গেছে। আজকেও ৩টা মারা গেছে। প্রতিদিনই আমার মুরগি মারা যাচ্ছে। রোজার মধ্যে থেকে শুরু হয়ে মুরগি মরা এখনো অব্যাহত আছে। কী কারণে মারা যাচ্ছে আমরা রোগটাই ধরতে পারছি না। আমাদের আশপাশের সকল বাড়িতেও একই অবস্থা। আমার পালনের সব মুরগি মারা যাচ্ছে। আমার হাঁসগুলোও অসুস্থ হয়ে হাঁটতে পারে না। ডিম দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। আজকে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এসে স্যাম্পল নিয়ে গেল। তারা এটা ঢাকায় পাঠিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করবে।
বিজ্ঞাপন
রাজবাড়ী সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. উমর ফারুক বলেন, আমরা স্থানীয়ভাবে খবর পাই কাজীকান্দা ব্যাংকপাড়া এলাকার বাসিন্দা জালাল উদ্দীন বাড়ির পাশে হাঁস-মুরগি, ঘুঘু, শালিকসহ অন্যান্য পাখি মারা যাচ্ছে। তারপর আমরা এখানে স্যাম্পল সংগ্রহ করার জন্য এখানে আসি। আমরা কয়েকটি অসুস্থ হাঁস-মুরগি দেখতে পাই। সেই সব হাঁস-মুরগি গুলোর ঝুঁটি কালো হয়ে গেছে, পা কালে হয়ে গেছে। আমরা প্রাথমিকভাবে আশঙ্কা করছি কোনো ভাইরাসজনিত রোগ হতে পারে। সংগ্রহকৃত স্যাম্পলগুলো আমরা ঢাকাই পাঠাবো। সেখান থেকে আমরা ডায়াগনোসিস করে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
তিনি আরও বলেন, অসুস্থ ও মৃত হাঁস-মুরগিগুলোকে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে এবং সুস্থ মুরগিগুলোকে আলাদা করে রাখতে হবে। ভ্যাকসিন ছাড়া বার্ড ফ্লুর প্রতিকারের কোনো উপায় নেই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ভ্যাকসিন বাণিজ্যিক খামারেই শুধু দেওয়া হয়। তবে পারিবারিক যে খামারগুলো রয়েছে সেখানে ভ্যাকসিন দেওয়াটা ফিজিবল না।
খামারিদের উদ্দেশ্যে এই কর্মকর্তা বলেন, যারাই হাঁস-মুরগি বাণিজ্যিক খামারে লালন-পালন করবেন হাঁস-মুরগির জন্য সংক্রামক রোগের যে টিকাগুলো রয়েছে তা নিয়মিত ও যথাসময়ে দিতে হবে। তবে রাজবাড়িতে এখন পর্যন্ত বার্ড ফ্লুর কোনো প্রমাণিত রেকর্ড নেই।
তিনি বলেন, যদি কখনো দেখা যায় যে প্রচুর হাঁস-মুরগি মারা যাচ্ছে সংক্রামক রোগে বা ছোঁয়াছে রোগে, অথবা পাখি মারা যাচ্ছে এর জন্য আমাদের পরামর্শ হলো কোনো অসুস্থ হাঁস-মুরগি জবাই করে খাওয়া যাবে না। যেগুলো অসুস্থ হয়ে মারা যাবে বা অসুস্থ থাকবে সেগুলোকে দ্রুত মাটিতে গর্ত করে পুঁতে ফেলতে হবে। যেখানে সেখানে ফেলা যাবে না, যেখানে সেখানে ফেললে তা পরবর্তীতে পার্শ্ববর্তী বাড়িতে বা এলাকায় ছড়িয়ে পড়বে। অসুস্থ পাখি বা হাঁস-মুরগি খাওয়া যাবে না। আতঙ্কিত না হয়ে খামারিদের সতর্ক থাকতে হবে।
মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/আরএআর