পরকীয়া প্রেমিকাকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে যুবকের মৃত্যুদণ্ড
নেত্রকোণায় পরকীয়া প্রেমিকাকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে নিজাম উদ্দিন (৩৩) নামে এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। রোববার (৪ মে) বিকেলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এ রায় দেন।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নিজাম উদ্দিন নেত্রকোণার পূর্বধলা উপজেলার আগিয়া গ্রামের মো. চাঁন মিয়ার ছেলে। হত্যার শিকার ওই নারীর নাম কমলা খাতুন। তিনি নেত্রকোণার দুর্গাপুর উপজেলার রাত্রা গ্রামের মাতাব উদ্দিনের মেয়ে।
বিজ্ঞাপন
মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, নিহত কমলা খাতুনের ভাই মো. নিজাম উদ্দিন পূর্বধলা থানায় অভিযোগ করেন- তারা তিন ভাই দুই বোন। তাদের ছোট বোনের নাম কমলা খাতুন। তাকে বিয়ে দেওয়ার পর স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হওয়ায় বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। বিচ্ছেদ হওয়ার পর তার বোন কমলা তার আরেক বোন চম্পা খাতুনের কাছে গিয়ে গাজীপুরের টঙ্গী থানাধীন মিরা বাজার এলাকায় গার্মেন্টসে চাকরি শুরু করেন।
২০২২ সালের ১৯ নভেম্বর আনুমানিক বিকেল ৩টার দিকে থানা পুলিশের মাধ্যমে সংবাদ পান তার বোন কমলা খাতুনের মরদেহ পূর্বধলা থানাধীন খলিসাউর গ্রামের পাবই দাসপাড়া বালুচড়া বাজারের দক্ষিণে রাস্তার পাশে পাওয়া গেছে। এমন সংবাদ পেয়ে নিজাম উদ্দিন পূর্বধলা থানায় গিয়ে জানতে পারেন তার বোনের মরদেহ নেত্রকোণা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। পরে তারা হাসপাতালের মর্গে বোনের মরদেহ শনাক্ত করেন। তারা নিহতের পেটে অস্ত্রের আঘাতে ভুড়ি বের হয়ে যাওয়া অবস্থায় দেখতে পান।
বিজ্ঞাপন
এরপর নিজাম উদ্দিন ছোট বোন চম্পার কাছে জানতে পারেন- কমলা খাতুন ২০২২ সালের ১৮ নভেম্বর আনুমানিক বিকেল ৪টায় টঙ্গী মিলগেট এলাকায় ভাতিজা মাসুদের বাসায় যাবে বলে বাসা থেকে বের হয়ে আর বাসায় ফিরেনি। তাদের বাসার পাশের বাসার একজনকে কমলা দুলা ভাই বলে ডাকতো। তাকে ঘটনাটি জানানোর জন্য গিয়ে দেখতে পান, তার বাসাটি তালাবদ্ধ অবস্থায় রয়েছে। তখন তাদের সকলের ধারণা হয় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি বা ব্যক্তিরা পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কমলাকে হত্যা করেন এবং মরদেহ গুম করার উদ্দেশ্যে পূর্বধলা থানার খলিসাউড় গ্রামের বালুচড়া বাজার দক্ষিণ পাশে পাকা রাস্তা পাশে কলা বাগানে ফেলে রাখে।
আদালত সূত্রে আরও জানা যায়, অভিযুক্ত নিজাম উদ্দিনের সঙ্গে নিহত কমলা খাতুনের অবৈধ সম্পর্ক ছিল।
এই সম্পর্কের জেরে কমলা খাতুন নিজাম উদ্দিনকে বিয়ের চাপ দিলে এ নিয়ে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে নিজাম কমলাকে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নেন। আসামি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে আদালতের কাছে কমলাকে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। ১১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে বিজ্ঞ আদালত আজ এ রায় দেন।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হিসেবে ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবুল হাশেম এবং আসামিপক্ষের আইনজীবী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট শামসুদ্দিন।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আবুল হাসেম বলেন, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আসামি নিজাম উদ্দিনকে দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। আসামি নিজাম উদ্দিন মৃত কমলা খাতুনের সঙ্গে পরকীয়ায় জড়িত ছিলেন। পরবর্তী সময়ে কমলা খাতুন তাকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে আসামি তাকে ‘দা’ দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন।
মুন্না/আরএআর