যাদু-মন্ত্রের জোরে বিষধর সাপকে কাছে টানার চেষ্টা
মৃত মানুষের হাড়, কলাগাছ, মোমবাতি, বালু ও পানিসহ নানান কিছু নিয়ে তান্ত্রিকরা তাদের কেরামতি শুরু করেন। চারদিক থেকে তারা (সাপ) পাতার দিকে ছুড়তে থাকেন যাদু ও মন্ত্র। নিজের মন্ত্র শক্তি দিয়ে অন্য তান্ত্রিকদের ছোড়া মন্ত্র ভেদ করে নিজের কাছে পাতাকে এনে পরাস্ত করতে পারলেই পয়েন্ট।
এভাবে যে যতবার (সাপ) পাতাকে নিজের বৃত্তে আবদ্ধ করতে পারবে তিনি তত পয়েন্ট পাবেন। ঢোলের তাল আর যন্ত্রের ঝোঁকে তান্ত্রিকরা নানান অঙ্গ-ভঙ্গি এবং কেরামতি দিয়ে মাতিয়ে তোলেন সব বয়সী দর্শকদের।
বিজ্ঞাপন
সোমবার (৫ মে) বাংলা নরবর্ষ উপলক্ষে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নে ভুল্লী বাধ যুব সংঘের আয়োজনে কুমারপুর এলাকায় গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী পাতা খেলা প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় মাঠজুড়ে ছিল দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়। সেই সঙ্গে পুরো এলাকায় ছিল উৎসবের আমেজ।
বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ৮টি তান্ত্রিক দল তাদের তন্ত্রমন্ত্র দিয়ে পাতারূপী সাপকে মাঠের মাঝখান থেকে চারদিকে টানার প্রতিযোগিতা করে। প্রতিযোগিতায় যার পয়েন্ট বেশি হয় সেই তান্ত্রিক দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। বিজয়ী দলকে পুরস্কার হিসেবে দেওয়া হয় আড়াই হাজার টাকা মূল্যের একটি পুরস্কার। এমন খেলা দেখে বিমোহিত ও খুশি দর্শকরা।
বিজ্ঞাপন
খেলা দেখতে আসা সুরভী আক্তার নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি কখনও এই পাতা খেলা দেখিনি। এবারই প্রথম দেখলাম। আমার কাছে অনেক ভালো লাগলো। শুধু আমি না, আমার অনেক বান্ধবী এই পাতা খেলা দেখতে আসছে।
বেলাল হোসেন নামে এক কৃষক বলেন, আমরা যখন যুবক ছিলাম প্রতিনিয়তই এ খেলাগুলো হতো। কালের বির্বতনে খেলাগুলো হারিয়ে গেছে। এগুলো আবারো ফিরে আনা দরকার। কারণ এগুলো মানুষকে বিনোদন দেয়। আজ অনেকদিন পর আবারো পাতা খেলা দেখতে পেরে আমি খুব খুশি।
আরেক বৃদ্ধ মুনসুর আলী বলেন, আমরা এই খেলা অনেক আগে দেখেছি। মাঝখানে ছিল না।
খেলায় অংশগ্রহণকারী পুরঞ্জয় নামের এক তান্ত্রিক ঢাকা পোস্টকে জানান, তান্ত্রিকদের মতে, প্রাচীনকাল থেকে গুণীকরা খেলত এই পাতা খেলা। আর এজন্য যে মন্ত্র প্রয়োজন তা অতি কঠিন। তবে খেলায় পুরস্কার পাবার আশায় নয়, মানুষকে বিনোদন দিতে এবং নিজেও আনন্দ উপভোগ করতে খেলায় অংশগ্রহণ করেছি।
তিনি আরো বলেন, যার মন্ত্রের জোর বেশি সাপ তার কাছেই যাবে। খেলা শুরু হওয়ার ২০ মিনিট পর একটি সাপ মারা যায়। বাপ দাদার কাছ থেকেই এই মন্ত্র নেওয়া বলে জানান তিনি।
খেলার আয়োজক কমিটির সদস্য মাইজুদ্দিন ঢাকা পোস্টকে জানান, আমরা এলাকার মানুষকে আনন্দ দিতে ও মাদক থেকে যুব সমাজকে দূরে রাখতে এবং হারিয়ে যাওয়া গ্রাম বাংলার এই খেলাটি নতুন প্রজন্মকে জানান দিতেই আমাদের এই আয়োজন। খেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ৮টি তান্ত্রিক দল অংশগ্রহণ করেছে এবং খেলাটিও বেশ জমজমাট হয়েছে। আশা করছি স্থানীয়দের সহযোগিতা পেলে মানুষকে আনন্দ দিতে প্রতি বছর এ খেলার আয়োজন করা হবে।
রেদওয়ান মিলন/এমএএস