ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে দালালদের মাধ্যমে ঘুষ লেনদেনসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে ছদ্মবেশে রাজবাড়ীতে অভিযান পরিচালনা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ সময় দালাল ধরে লাইসেন্স ও গাড়ির রেজিস্ট্রেশন করার সত্যতা পায় তারা। তখন হাতেনাতে চার দালালকে আটক করে দুদকের কর্মকর্তারা।

বুধবার (৭ মে) বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজের নেতৃত্বে রাজবাড়ী বিআরটিএতে এই অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানে রাজবাড়ী সদর উপজেলার চরলক্ষীপুর গ্রামের আব্বাস আলী খানের ছেলে মো. আশিক খান, রামকান্তপুর ইউনিয়নের কাজিবাধাঁ বেথুলিয়া গ্রামের মৃত বেলায়েত হোসেনের ছেলে মো. আকরামুজ্জামান, গোপীনাথদিয়া গ্রামের রহমত আলী মৃধার ছেলে লিয়াকত আলী মৃধা ও পৌরসভার কাজীকান্দা গ্রামের আব্দুল মতিনের ছেলে মো. মনসুর আহমেদকে আটক করা হয়।

এ সময় আশিক খান নামের দালালের কাছ থেকে ৩৩ হাজার ১০০ টাকা, মো. আকরামুজ্জামানের কাছ থেকে ২৫ হাজার ৮০ টাকা ও লিয়াকত আলী মৃধার কাছ থেকে ১৪ হাজার ২৪০ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে। এসব টাকা তারা বিভিন্ন ড্রাইভিং লাইসেন্স করতে আসা বিভিন্ন পরীক্ষার্থীর নিকট থেকে গ্রহণ করেছে।

এর আগে, ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল ঢাকা পোস্টে রাজবাড়ী বিআরটিএতে ‘দালাল ধরলে পরীক্ষা ছাড়াই মেলে ড্রাইভিং লাইসেন্স’ শিরোনামে সংবাদ ও ভিডিও নিউজ প্রকাশ হয়। নিউজ প্রকাশ হওয়ার পরেও রাজবাড়ী বিআরটিএতে দালাল চক্রের আনাগোনা ছিল।

দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজ বলেন, রাজবাড়ী বিআরটিএতে ড্রাইভিং লাইসেন্স পেতে ভোগান্তি ও ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগের প্রেক্ষিতে প্রধান কার্যালয়ে এনফোর্সমেন্ট ইউনিট কর্তৃক নির্দেশিত হয়ে ফরিদপুর জেলা কার্যালয় আজকের রাজবাড়ী বিআরটিএতে অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযান পরিচালনাকালে আমরা ছদ্মবেশে বিআরটিএর বিভিন্ন সেবা কার্যক্রম পরিলক্ষিত করেছি। আমরা দেখেছি, বিআরটিএ অফিসে দালাল চক্রের আনাগোনা রয়েছে। সেবা পেতে কি ধরনের ভোগান্তি হয় তা আমরা স্বচক্ষে দেখেছি এবং অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। আমরা চারজন দালালকে আটক করেছি। তিনজন দালালের কাছ থেকে ৭২ হাজার ৪২০ টাকা উদ্ধার করেছি। এই টাকা তারা বিভিন্ন পরীক্ষার্থীর কাছ থেকে নিয়েছেন। দালালরা বিআরটি অফিসের মধ্যে থাকতেন। তাদের জন্য অফিসের মধ্যে আলাদা রুম ছিল।

তিনি আরও বলেন, আমরা রাজবাড়ী বিআরটিএর রাজবাড়ী ইন্সপেক্টরের কাছে কাগজপত্র চেয়েছি। এ ছাড়া আমরা প্রাথমিক যে সত্যতা পেয়েছি এবং পরবর্তী কাগজপত্র বিশ্লেষণ করে আমরা কমিশন বরাবর বিস্তারিত প্রতিবেদন দাখিল করব। পরবর্তী কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

উল্লেখ্য, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও ফিটনেস সার্টিফিকেট প্রদানে দালালদের মাধ্যমে ঘুষ লেনদনসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে রাজবাড়ীসহ দেশের ৩৫টি বিআরটিএ অফিসে অভিযান পরিচালনা করছে দুদক।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এএমকে