নিহতের পরিবারে চলছে আহাজারি

ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মাদারীপুরের একই পরিবারের নিহত ৪ জনের মধ্যে দুইজন ছিলেন মসজিদের ইমাম। বৃহস্পতিবার (৮ মে) রাতে মাদারীপুর সদর উপজেলার উত্তর দুধখালী ইউনিয়নের মিঠাপুর গ্রামে নিহতদের বাড়িতে গেলে এ তথ্য জানান স্থানীয়রা। তারা স্থানীয় দুটি মসজিদে ইমামতি করে সংসার চালাতেন। এ ঘটনায় মোট নিহত হয়েছেন ৫ জন ও আহত হয়েছেন অন্তত আরও ৩ জন। 

মর্মান্তিক এ ঘটনায় এলাকাজুড়ে চলছে শোকের মাতম। নিহত পরিবারের স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে পড়েছে আকাশ-বাতাস। এদিকে আর্থিক সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। ঘাতক বাস চালকের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

নিহতরা হলেন, মাদারীপুর সদর উপজেলার মিঠাপুর গ্রামের মাওলানা সামাদ ফকির, তার ছেলে হাফেজ বিল্লাল ফকির, স্ত্রী সাহেদা বেগম, মেয়ে আফসানা আক্তার এবং অ্যাম্বুলেন্স চালক মাহবুব সরদার।

সরেজমিন দেখা গেছে, নিহত সামাদ ফকিরের বাড়ির পাশেই খোঁড়া হয়েছে ৪টি কবর। সামাদ ও তার স্ত্রী, ছেলে ও মেয়েকে পাশাপাশি দাফন করবেন এলাকাবাসী ও স্বজনরা।

পুলিশ, স্বজন ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, অ্যাম্বুলেন্সে করে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী রোজিনা বেগমকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন হাফেজ বিল্লাল ফকির ও তার পরিবারের সদস্যরা। পথিমধ্যে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ের নিমতলা তালুকদার পাম্পের সামনে এলে অ্যাম্বুলেন্সটির চাকা ফেটে যায়। এসময় মেরামত করার জন্য রাস্তার পাশে থামিয়ে রাখা হয়। পরে চাকা পালটানোর সময় পেছন দিক থেকে বেপরোয়া গতিতে আসা ঢাকাগামী গোল্ডেন লাইন পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাস অ্যাম্বুলেন্সের পেছনে ধাক্কা দেয়। এতে একই পরিবারের ৪ জনসহ ৫ জন মারা যায়। তবে ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায় অন্তঃস্বত্তা গৃহবধূ রোজিনা আক্তার। পরে রাজধানী ঢাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে তার সিজার করানো হয়। এসময় রোজিনার কোলজুড়ে একটি পুত্র সন্তানের জন্ম হয়।

এদিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মর্গে নিহতদের ময়না তদন্ত শেষ হয়। পরে নিহতদের মরদেহ তাদের গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরে নিয়ে আসা হয় । সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে নিহত ৪ জনকে পাশাপাশিশুক্রবার দাফন করা হবে।

স্থানীয়রা জানায়, নিহত মাওলানা সামাদ ফকির ও তার ছেলে হাফেজ বিল্লাল ফকির দুজনেই ছিলেন দুটি মসজিদের ইমাম। নিহত বিল্লালের স্ত্রী রোজিনা অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। তাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যাচ্ছিলেন পরিবার। এসময়ই ঘটে দুর্ঘটনা।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য শারাফ উদ্দিন বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় ৫ জন নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে একই পরিবারের ৪ জন রয়েছে। দ্রুতগতির একটি বেপরোয়া বাস অ্যাম্বুলেন্সকে পেছন থেকে চাপা দেয়। এতেই তাদের মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় আমরা বাস চালকের শাস্তি চাই এবং সরকারের কাছে অনুরোধ নিহতদের পরিবারকে যেন অর্থিক সহযোগিতা করা হয়।

মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব বলেন, একই পরিবারের ৪ জন নিহত হয়েছে। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। নিহতের পরিবার আবেদন করলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে আর্থিক সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।

আকাশ আহম্মেদ সোহেল/এমএএস