খাগড়াছড়িতে বিদেশি জাতের আম চাষে নতুন সম্ভাবনা
খাগড়াছড়ির পাহাড়ি জনপদে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বিদেশি জাতের আম চাষ। জাপান, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও আমেরিকার নামীদামী জাতের আম এখন বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে জেলার বিভিন্ন উপজেলায়। আকর্ষণীয় রঙ, অসাধারণ স্বাদ এবং উচ্চ বাজারমূল্যের কারণে এই আমগুলোর প্রতি ক্রেতা ও কৃষকের আগ্রহ বাড়ছে।
সদর উপজেলার ভাই-বোন ছড়া এলাকার কৃষক উচনু চৌধুরী দেশীয় জাতের পাশাপাশি ৫ একর জমিতে বিদেশি জাতের আমের বাগান গড়ে তুলেছেন। তার বাগানে রয়েছে মিয়াজাকি, চিয়াংমাই, ব্যানানা ম্যাংগো, আমেরিকান রেড পালমার, কিউজাই ও ব্লাকস্টোন ম্যাংগোর মতো জনপ্রিয় জাত।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, “বিদেশি আমের ফলন ভালো হচ্ছে, দেশের বাজারে দামও বেশ ভালো। আমি এই খাতে আরও বড় পরিসরে কাজ করতে চাই।”
একই উপজেলার ভূয়াছড়ি এলাকায় মং গ্রীন লাইফ এগ্রোফার্মের মালিক মংশিতু চৌধুরী ২০১৪ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে আম চাষে নামেন। বর্তমানে তিনি ৩০ একর জমিতে ৫৪ প্রজাতির দেশি ও বিদেশি আম চাষ করছেন। মংশিতু চৌধুরী বলেন, ‘এই মৌসুমে অন্তত ৫০ লাখ টাকার আম বিক্রির আশা করছি। প্রচলিত জাতের চেয়ে বিদেশি আম চাষে লাভ অনেক বেশি।’
বিজ্ঞাপন
বিদেশি আমের বাজারমূল্যও বেশ আকর্ষণীয়। বাজারে এক কেজি মিয়াজাকি আম বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৯০০ টাকায়, রেড আইভরি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়, ব্যানানা ম্যাংগো ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়, হানিডিউ ও আরটুইটু ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায়, কিং অফ চাকাপাত ৫০০ থেকে ৭০০ টাকায়, কিউজাই ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়, পালমার ও ব্রুনাই কিং ৫০০ টাকায়। এই আমগুলো মূলত অনলাইনের মাধ্যমে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন শহরে সরবরাহ করা হচ্ছে।
খাগড়াছড়ি ফল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সভাপতি সমির হোসেন সুজন বলেন, জেলায় প্রতি বছর প্রায় ৭০০ থেকে ৮০০ কোটি টাকার বিভিন্ন জাতের আম উৎপাদিত হয়। সরকারি টোল সঠিকভাবে আদায় ও চাঁদাবাজি বন্ধ হলে বাইরের ব্যবসায়ীরা এখানে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন।
খাগড়াছড়ি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বাছিরুল আলম বলেন, ‘বিদেশি আমের চাষে কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। পরিচর্যার খরচ দেশি আমের মতোই, কিন্তু লাভ বেশি হওয়ায় আমরা কৃষকদের উৎসাহ দিচ্ছি এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে খাগড়াছড়ির অর্থনীতিতে বড় পরিবর্তন আসবে এবং কৃষি খাত হয়ে উঠবে আরও শক্তিশালী ও লাভজনক।
মোহাম্মদ শাহজাহান/আরকে