জগন্নাথে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন জসিম, কিন্তু ভর্তি ও থাকা খাওয়ার টাকা নেই
পরিবারে অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতা না থাকায় বাবার সঙ্গে দিনমজুরির কাজ করে করেছেন জসিম উদ্দীন। পাশাপাশি পড়াশোনা চালিয়ে গেছেন সমানতালে। এভাবেই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন তিনি। এ সাফল্য জসিম ও তার দরিদ্র পরিবারের সদস্যদের অফুরন্ত আনন্দ এনে দিয়েছে। তবে জসিমসহ তার পরিবার এখন দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন জসিমের ভর্তি ও পড়ালেখা নিয়ে।
তবুও তিনি স্বপ্ন বুনছেন সরকার বা বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা শেষ করে দেশের জন্য ভালো কিছু করতে পারবেন।
বিজ্ঞাপন
ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার সীমান্তে বড়পলাশবাড়ী ইউনিয়নের চোচপাড়া বুরাবার গ্রামের দিনমজুরের ছেলে জসিম উদ্দিন। চলতি বছর ভর্তি পরীক্ষায় সফল হলেও অর্থের অভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি।
জসিম উদ্দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ‘ডি’ ইউনিটে ৪৪৭তম মেধাক্রমে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া তার পক্ষে এখন বড় চ্যালেঞ্জ।
বিজ্ঞাপন
জসিমের বাবা তসলিম উদ্দিন একজন দিনমজুর এবং মা মহসিনা বেগম গৃহিণী। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে ছোট জসিম পরিবারে শিক্ষাজীবন চালিয়ে যাচ্ছেন নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। বড় পলাশবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক ও সমিরউদ্দীন স্মৃতি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেছেন তিনি।..
ছোটবেলা থেকে বাবা-মায়ের হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম দেখে আসছেন জসিম। দিনমজুরের কাজ করা বাবার সংসারের ভরণপোষণের টানাপোড়েন নিত্যদিনের সঙ্গী। আরেকদিকে সংসারকে টিকিয়ে রাখতে মায়ের পরিশ্রম অভাবনীয়। নানাবিধ চাহিদা আর অভাব যেন নিত্য সময়ের সঙ্গী জসিমের পরিবারের।
ছোটবেলা থেকে দৃঢ় মনোবল ও আত্মবিশ্বাসের অধিকারী জসিম। অভাব ও সংসারের টানাপড়েনকে সাথে নিয়ে স্কুল ও কলেজের গণ্ডি পেরিয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তবে আর্থিক সংকটের কারণে তার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া অনিশ্চয়তার মুখ দেখছে।
এদিকে অভাবকে জয় করে বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পাওয়া জসিম উদ্দিন বলেন, আমার স্বপ্ন প্রশাসনের ক্যাডার হয়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও এখন পরিবারের টানাপোড়েনে সেই স্বপ্ন থমকে গেছে। আগামী ২০ মে ভর্তির শেষ তারিখ। এখনও ভর্তির টাকা জোগাড় হয়নি। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হল সুবিধা না থাকায় ভর্তি হওয়ার পরে ম্যাচে থেকে পড়াশোনা করতে হবে।
জসিমের বাবা তসলিম উদ্দীন জানান, স্কুল-কলেজের পড়াশোনা করার সময় একসাথে এত টাকা লাগেনি। অল্প করে খরচ ছিল, দিনমজুরি করে চালিয়েছি। এখন একসাথে ভর্তির টাকা, ম্যাচে থাকতে হবে। ভাড়া, খাওয়া খরচ সবমিলিয়ে এত টাকা জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। ভিটেবাড়ি ছাড়া কোনো সম্পদ নেই যে বিক্রি করে ছেলের পেছনে খরচ করবো।
ছেলের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ভর্তির জন্য সহযোগিতা চান জসিমের বাবা ও মা। তাদের অনুরোধ এই দুঃসময়ে ছেলের স্বপ্ন পূরণে মানবিক মানুষগুলো যেন এগিয়ে আসেন সহযোগিতা করতে।
প্রতিবেশী মাজেদুর রহমান বলেন, সোহানের বাবা-মা অনেক কষ্ট করেন। আমরা চাই সে আরও বেশি সফলতা অর্জন করুক। আপনারা সবাই তার পাশে থাকবেন।
বড়পলাশবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নগেন্দ্র নাথ পাল বলেন, জসিম পড়াশোনা করেছে অনেক কষ্ট করে। এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিটা টাকার জন্য আটকে গেছে। সবাই এগিয়ে এলে ছেলেটার ভবিষ্যত সুন্দর হবে। আমরাও স্কুল থেকে চেষ্টা করছি।
এদিকে সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পলাশ কুমার দেবনাথ। তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধ্যমতো তাকে সহযোগিতা করা হবে।
রেদওয়ান মিলন/এমএএস