পরীক্ষা কেন্দ্র ভাঙচুররোধে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ, প্রশংসায় ভাসছেন ডিসি
এসএসএসি পরীক্ষার সমাপ্তির দিনে নারায়ণগঞ্জের অনেক পরীক্ষা কেন্দ্র ভাঙচুরের অভিযোগ এসেছিল শিক্ষার্থীদের জেলা প্রশাসনের কাছে। পূর্বেও এমন অনেক ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জে। তবে এবার ভাঙচুররোধে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা ব্যতিক্রমী এক উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়েছে। যা দেখে অবাক হয়েছে শিক্ষার্থীরাও। জেলা প্রশাসক পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগে কেন্দ্রে হাজির হয়েছেন চকলেট নিয়ে। এ সময় পরীক্ষা শেষে বের হওয়া পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে তিনি কুশল বিনিময় করেন এবং তাদের চকলেট উপহার দেন। একইভাবে বিভিন্ন কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করেছেন জেলা প্রশাসনের অন্য কর্তারা।
জেলা প্রশাসকের ব্যতিক্রমী এই উদ্যোগের বিষয়ে জেলার ইসলামিক এডুকেশনাল ট্রাস্ট (আই.ই.টি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সেলিনা আক্তার বলেন, এটা কল্পনা করা যায় একজন ডিসি নিজে উপস্থিত থেকে ক্ষুদে শিক্ষার্থীদের চকলেট উপহার দিয়ে তাদের ভালো কাজে মোটিভেটেড করছেন? আমরাও শিক্ষার্থী ছিলাম এক সময়। আমরা এসব স্মরণীয় মুহূর্ত থেকে বঞ্চিত ছিলাম। আমরা এসব কিছুই দেখিনি। ডিসি স্যারের কাছে থেকে চকলেট পাওয়া সত্যিই ভাগ্যের ব্যাপার।
বিজ্ঞাপন
কদমতুলি এম ডব্লিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রওশন আরা আক্তার বলেন, আমাদের কেন্দ্রে এবার ১৭৫৯ জন শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে। গত বছর শেষ পরীক্ষার দিন পরীক্ষা শেষে কেন্দ্র ভাঙচুর করেছিল। এবার ভাঙচুর ঠেকাতে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মহোদয় এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন। উনার নির্দেশে আমরা পরীক্ষা শেষে সব পরীক্ষার্থীদের চকলেট উপহার দিয়েছি ডিসি স্যারের পক্ষ থেকে। ডিসি স্যারের কাছে থেকে এই ছোট উপহার পেয়েও শিক্ষার্থীরা অনেক খুশি হয়েছে।
আমরা শিক্ষার্থীদের ভালো কাছে উদ্বুদ্ধ করেছি চকলেট দেওয়ার সময়। শিক্ষার্থীরাও ব্যাপক উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে।
পাগলা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা সেলিনা সুলতানা বলেন, আমাদের কেন্দ্রে মোট ১১৭৪ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছিল। গত বছর কিছু পরীক্ষার্থী আমাদের কেন্দ্রও ভাঙচুর করেছিল শেষ পরীক্ষার দিনে। আজ পরীক্ষা শেষে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আমরা ডিসি স্যারের নির্দেশে চকলেট উপহার দিয়েছি। বাচ্চারা অনেক আনন্দ পেয়েছে। আমরাও সুন্দরভাবে তাদের কেন্দ্র থেকে বিদায় দিয়েছি। কোনো ধরনের ঝামেলা হয়নি।
বিজ্ঞাপন
নারায়ণগঞ্জ কামিল মাদরাসা ও আদর্শ স্কুল কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত শিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, ডিসি স্যারের চকলেট উপহার পেয়ে উচ্ছ্বসিত পরীক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে কেন্দ্র ত্যাগ করেছে। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
সিদ্ধিরগঞ্জের টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষক ফেরদৌস রহমান বলেন, পরীক্ষা শেষ করে আনন্দের উত্তেজনায় জেলার কিছু পরীক্ষা কেন্দ্র ভাঙচুর করেছিল গত বছর। তবে এবার ভাঙচুররোধে জেলা প্রশাসক স্যারের এই রকম আইডিয়া দারুণ হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ জেলার ৪৮টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী ৩৩ হাজার ১৮২ জন পরীক্ষার্থীর মাঝে পরীক্ষা শেষে জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে চকলেট উপহার দেওয়া হয়েছে। ভাঙচুররোধে ব্যতিক্রমী আয়োজনটি নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম নিজে তদারকি করেছেন।
জেলা প্রশাসক স্বয়ং উপস্থিত থেকে ইসলামিক এডুকেশনাল ট্রাস্ট (আই.ই.টি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের মাঝে চকলেট বিতরণ করেন। তিনি এ সময় শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যতে কর্মপরিকল্পনার কথা জিজ্ঞেস করেন এবং ভালো কাজে উদ্বুদ্ধ করেন বলে জানা গেছে। তিনি শিক্ষা জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় সম্পন্ন করায় তাদের শুভেচ্ছাও জানান।
এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি), সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ ও স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীগণ।
এমএএস