ময়মনসিংহের নান্দাইলে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িত থাকার পরও উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সানাউল্লাহ ও তার ভগ্নিপতি উপজেলা শ্রমিক লীগের সদস্য শফিকুল ইসলাম এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এখনো তটস্থ তারা। থানা-পুলিশ বলছে, বর্তমানে এই ২ শ্রমিক লীগ নেতা পলাতক রয়েছেন। এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে।  
   
বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক নজিবুল্লাহ ও উপজেলা শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সানাউল্লাহ দুই ভাই। তাদের নেতৃত্বে বিগত ১৫ বছর উপজেলাজুড়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ত্রাসের রাজস্ব কায়েম হয়েছিল। এসব কর্মকাণ্ডে তাদের সঙ্গী হয়েছেন ভগ্নিপতি উপজেলা শ্রমিক লীগের সদস্য শফিকুল ইসলাম। সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজি, জয়গা দখল, সরকারি সম্পত্তি দখল, মাদক কারবারিসহ সাধারণ মানুষকে অযথা হয়রানি করে টাকা আদায় ছিল তাদের নিত্যদিনের কাজ। এসব ঘটনায় বড় ভাই নজিবউল্লাহর বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১৮টি মামলা দায়ের হয়। বর্তমানে তিনি কারাবন্দি। তবে ছোট ভাই সানাউল্লাহ ও ভগ্নিপতি শফিকুল এই পর্যন্ত গ্রেপ্তার না হওয়ায় এখনো তাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এলাকাবাসী তটস্থ। এমন অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।  
   
সূত্র জানায়, ভারতীয় চিনি ও জিরা পাচার, পরিবহন চাঁদাবাজী, চিনি লুটসহ নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অবৈধ অস্ত্র প্রর্দশনের অভিযোগ রয়েছে সানাউল্লাহ, নজিবুল্লাহ ও শফিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এসব ঘটনায় বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে এই দুই শ্রমিক লীগ নেতাকে দল থেকে বহিষ্কার করলেও পরে পদ ফিরে পান। এতে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন এই দুই শ্রমিক লীগ নেতা। ফলে সারাদেশে আওয়ামী লীগ নেতারা পালিয়ে বেড়ালেও এই সন্ত্রাসীরা এখনো রয়ে গেছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
   
নান্দাইল উপজেলার বিএনপি নেতা ও ব্যবসায়ী শহিদুজ্জামান মিলটন অভিযোগ করে বলেন, বিগত সরকারের সময়ে দলীয় ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমার মৃত ভাইয়ের স্ত্রীর কাছ থেকে কৌশলে জমি কেনে। এর পাশে থাকার আমার জমিও জবরদখল করে নেয় এই দুই শ্রমিক লীগ নেতা। এতে বাঁধা দেওয়ায় মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রীদের সঙ্গে নিয়ে তারা আমার ওপর সন্ত্রাসী হামলা চালায়। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে গেলেও তখন মামলা নেয়নি পুলিশ। ওই ঘটনার আক্রোশে সন্ত্রাসীরা গত ঈদুল ফিতরের সময় আমার বাসা থেকে প্রায় ৫ লাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। এ নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের হলেও তারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি।  
 
স্থানীয় বিএনপি নেতা সালমান আলী বলেন, সন্ত্রাসী নবিজুল্লাহ, সানাউল্লাহ ও শফিকুল বিগত জুলাই আন্দোলন দমনে অস্ত্র হাতে রাজপথে ছিল সক্রিয়। কিন্তু স্থানীয় বিএনপি গ্রুপিংয়ে বিভক্ত থাকায় ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। এ কারণেই ফ্যাসিস্ট সন্ত্রাসীরা এখনো তাদের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। 

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও শ্রমিক লীগ নেতা সানাউল্লাহ ও শফিকুল ইসলামের বক্তব্য জানা যায়নি।  

নান্দাইল উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ইয়াসের খান চৌধুরী ঢাকা পোস্টকে বলেন, জুলাই আন্দোলনে হামলার ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। এছাড়া ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে জেলা সদরেও মামলা হয়েছে। এসব মামলার আসামিরা অনেকে গ্রেপ্তার হলেও অনেকেই পলাতক রয়েছেন। বিষয়টি থানা পুলিশকে অবহিত করা হয়েছে।    

নান্দাইল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগ নেতা নজিবুল্লাহ বর্তমানে কারাগারে আছেন। তবে তার ভাই ও ভগ্নিপতি পলাতক রয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তার অভিযান চলমান আছে।     

আমান উল্লাহ আকন্দ/আরকে