মাত্র দুই ঘণ্টার টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে নোয়াখালী জেলা শহরের অধিকাংশ এলাকা। মঙ্গলবার (২০ মে) বিকেলে থেকে শুরু হওয়া মাঝারি থেকে ভারী ধরনের বৃষ্টি দ্রুতই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি করে। এ দিন বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বলে জানান আবহাওয়া অফিস।

পানি নিষ্কাশন বা ড্রেনেজ ব্যবস্থার চরম দুর্বলতার কারণে শহরের প্রধান সড়ক, উপসড়ক ও আবাসিক এলাকাগুলো হাঁটুপানির নিচে চলে যায়। এতে করে চরম দুর্ভোগে পড়েন শহরের সাধারণ মানুষ, দোকানি, শিক্ষার্থী এবং নিম্ন আয়ের  লোকজন।

বাসিন্দাদের অভিযোগ, নোয়াখালী পৌরসভার ড্রেন ও খালগুলোতে দিনের পর দিন ধরে ময়লা আবর্জনা জমে যাওয়ায় এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতার এই ক্রান্তিকালীন সমস্যাকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন নোয়াখালীর বাসিন্দারা। দ্রুত ড্রেনেজ উন্নয়ন ও পানি নিষ্কাশনের টেকসই পরিকল্পনার দাবি জানাচ্ছেন নাগরিক সমাজ। সরেজমিনে শহরের প্রাণকেন্দ্রে নোয়াখালী টাউন হল, ফ্লাট রোড, পাঁচ রাস্তার মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে সড়কে ও দোকানপাটে জলাবদ্ধতা দেখা যায়।

নোয়াখালীর মূল শহর মাইজদী’র জিহাদ স্টোরের স্বত্ত্বাধিকারী জিহাদ হোসেন ঢাকা পোস্টক বলেন, “শহরের প্রত্যেকটি ড্রেন ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ হয়ে আছে। এছাড়া খালগুলো দখল এবং ময়লা আবর্জনা ফেলে মৃতপ্রায় অবস্থা হয়ে আছে। ফলে বৃষ্টি হলেই শহর ডুবে যাচ্ছে। বর্ষা আসার আগেই মাত্র দুই ঘন্টার বৃষ্টিতে জেলা শহর তলিয়ে গেছে। অথচ প্রশাসনের কোনো পরিকল্পনাই কাজে আসে নাই। এর সব দায় প্রশাসনের।”

জিলা স্কুলের সামনের গোলাম কিবরিয়া রাহাত নামের এক ব্যবসায়ী ঢাকা পোস্টক বলেন, “আমার দোকানে পানি উঠে গেছে। মালামাল উঠিয়ে রাখতে পারিনি, ক্ষতি হয়ে গেল। কিছুদিন আগে একটা পিসি নষ্ট হয়েছে এখন ত প্রায় মেশিন নষ্ট হয়েছে। এমন অব্যবস্থাপনা থাকলে ব্যবসা কন্টিনিউ করা কঠিন হয়ে যাবে।”

রুহুল আমিন নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা  অভিযোগ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, অপরিকল্পিত নির্মাণকাজ ও ড্রেনেজ লাইনের নিয়মিত পরিষ্কার না হওয়ার ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই পানি জমে যায়। শহরের অনেক ড্রেনই ময়লা ও প্লাস্টিকে ভর্তি, যার ফলে পানি দ্রুত নিষ্কাশন সম্ভব হয় না।

জেলা আওহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, “মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬ টা থেকে ৮ টা পর্যন্ত ভারী বর্ষণ হয়েছে।  রাত ৯ টায় অর্থাৎ তিন ঘন্টায় ১৭৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে।  যা এ পর্যন্ত বছরের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হিসেবে রেকর্ড হয়েছে। ”

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নোয়াখালী জেলার জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব মেহেদী হাসান সীমান্ত ঢাকা পোস্টকে বলেন, “বারবার দাবি জানিয়েও নোয়াখালীর জলাবদ্ধতা সমস্যায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ আসেনি। ফলে আবারও ভয়াবহ বন্যার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। এই অবস্থায় আর চুপ করে থাকা নয়—জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি এখন ফরজ হয়ে পড়েছে। প্রশ্ন জাগে, কেন বারবার নোয়াখালী অবহেলার শিকার হয়? আমাদের সমস্যাগুলো কেন গুরুত্ব পায় না? সময়ের দাবি—ঐক্যবদ্ধ হয়ে সাহসের সঙ্গে মাঠে নামা। এখনই না জাগলে, পরে আর সুযোগ নাও থাকতে পারে।”

জেলা প্রশাসক খন্দকার ইশতিয়াক আহমেদ ঢাকা পোস্টলে বলেন, গত বছর নোয়াখালীতে ভয়াবহ জলাবদ্ধতার পরই স্বল্প-মধ্য ও দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ণের কাজ শুরু হয়েছে। এর মধ্যেই পৌরসভা, উপজেলা প্রশাসন, পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে বৈঠক হয়েছে। বর্ষা শুরুর আগেই খাল-নালাগুলো অবৈধ দখলমুক্ত করে পুনঃখনন-পরিষ্কার করা হবে।

হাসিব আল আমিন/এসএমডব্লিউ