নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে এই প্রথম ঘুষ ছাড়া ঠিকাদারি লাইসেন্স পেলেন ৯২ জন ঠিকাদার। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা নিজ হাতে বুধবার ৯২ ঠিকাদারকে নতুন লাইসেন্স প্রদান করেন। কোনো ধরনের ঘুষ না দিয়েও নতুন লাইসেন্স পেয়ে স্থানীয় ঠিকাদাররা ভূঁয়সী প্রশংসা করলেন জেলার এই অভিভাবকের।

ঘুষ ছাড়া ঠিকাদারি লাইসেন্স হাতে পেয়ে মেসার্স আলী ইন্টারন্যাশনালের প্রোপাইটর মো. আলী আজগর বলেন, নারায়ণগঞ্জে ৪০ বছরের ঠিকাদারি জীবনে এই প্রথম এক পয়সা ঘুষ ছাড়াই ঠিকাদারি লাইসেন্স পেলাম শুধুমাত্র ডিসি জাহিদুল ইসলাম মিয়া স্যারের কারণে। তিনি বলেন, আমরা সরকারি যে ফিস ৫,৭৫০/- টাকা, সেটা জমা দিয়েই লাইসেন্স হাতে পেয়েছি সরাসরি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের হাত থেকে।
 
অন্য সময় তাদের কত টাকা ঘুষ দেওয়া লাগতো জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আগে জেলা পরিষদের কাছে থেকে ঠিকাদারি লাইসেন্স নবায়ন করতে হলেই ১৫/২০ হাজার টাকা ঘুষ দেওয়া লাগতো। নতুন লাইসেন্স করতে আরও বেশি টাকা অফিসে ঘুষ দেওয়া লাগতো।

মেসার্স মুলতাযাম ট্রেডার্সের প্রোপাইটর ঠিকাদার মো. রহুল আমিন দিপু বলেন, আজকে আমাদের ৯২ জন ঠিকাদারকে জেলা প্রশাসক নিজের হাতে জেলা পরিষদের ঠিকাদারি লাইসেন্স দিয়েছেন। সরকারি লাইসেন্স ছাড়া আমাদের অতিরিক্ত একটা পয়সাও লাগে নাই। এটা সবার কাছেই অবিশ্বাস্য মনে হবে। কিন্তু আজ বাস্তবেই দেখলাম শুধুমাত্র একজন জেলা প্রশাসক সৎ হলেই কীভাবে এক পয়সা ঘুষ ছাড়াই ঠিকাদারি লাইসেন্স পাওয়া যায়।

ঠিকাদারদের পক্ষ থেকে জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্থানীয় এই ঠিকাদার আরও বলেন, কাজ পেতেও আমাদের ঘুষ দেওয়া না লাগলে প্রতিটি কাজই আমরা টেন্ডারে উল্লেখিত সিডিউল অনুযায়ী কাজ করতে পারবো।

সাধারণ ঠিকাদারগণ যাতে ঘুষ ছাড়াই জেলার প্রতিটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাজ পেতে পারেন সেজন্য জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

বুধবার নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে নতুন ঠিকাদারদের লাইসেন্স প্রদান অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) হোসনে আরা বেগম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক), জেলা পরিষদের অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ এবং লাইসেন্স প্রাপ্ত নতুন ঠিকাদারগণ।

ঠিকাদাররা জেলা প্রশাসকের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে বলেন, একজন জেলা প্রশাসকের সরাসরি উপস্থিতিতে ও তার নিজ হাতে লাইসেন্স গ্রহণ করা তাদের জন্য এক বিশেষ সৌভাগ্যের বিষয়। এটি তাদের কাজের প্রতি দায়বদ্ধতা ও উৎসাহকে আরও দৃঢ় করবে বলে।

জেলা প্রশাসক জাহিদুল ইসলাম রাষ্ট্রের টাকা অপচয় না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমাদের রাষ্ট্রের যে সীমিত সম্পদ সেটা কাজে লাগাতে হবে। এ সম্পদ ও অর্থ যেন অপচয় বা অপব্যবহার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। কারণ এ অর্থ আপনার, আমার।
 
তিনি আরও বলেন, আমরা যে যে অবস্থানে আছি সেই অবস্থান থেকে দেশটাকে যদি সবাই ভালোবাসি তাহলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব। আপনারা যারা আছেন তারা যদি নিজেদের অবস্থান সঠিক রাখেন তাহলে আগামী প্রজন্ম আপনাকে অনুসরণ করবে। আপনার কর্মই আপনাকে সবার মাঝে বাঁচিয়ে রাখবে। পরিবর্তন আমাদেরকেই করতে হবে। শুধু যদি নিজেরটা ভাবি তাহলে হবে না। সকলকে নিয়ে ভাবতে হবে। 

অনুষ্ঠান শেষে গ্রিন এন্ড ক্লিন নারায়ণগঞ্জ কর্মসূচির অংশ হিসেবে জেলা পরিষদের সামনে বৃক্ষরোপণ করা হয়।

এমএএস