প্রেম প্রত্যাখ্যান করায় স্কুলছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যা, একজনের মৃত্যুদণ্ড
নেত্রকোনায় এক স্কুলছাত্রীকে কুপিয়ে হত্যার দায়ে মো. কাওছার মিয়া (২০) নামে একজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। পাশাপাশি ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২৭ মে) বিকেলে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান এই আদেশ দেন। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মো. কাওছার মিয়া নেত্রকোনা সদরের বারহাট্টা উপজেলার প্রেম নগর গ্রামের মো. শামছু উদ্দিনের ছেলে।
বিজ্ঞাপন
হত্যাকাণ্ডের শিকার মুক্তি রানী বর্মণও প্রেম নগর গ্রামের নিখিল চন্দ্র বর্মণের মেয়ে। সে প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ছিল।
আদালত ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, মামলার এজাহারকারী মুক্তি রানীর বাবা নিখিল চন্দ্র বর্মন বারহাট্টা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন যে, তাহার মেয়ে মুক্তি রানী বর্মন (১৬) বারহাট্টা থানাধীন প্রেমনগর ছালিপুরা উচ্চ বিদ্যালয়ে ১০ম শ্রেণিতে পড়ালেখা করতো।
বিজ্ঞাপন
মুক্তি বিদ্যালয়ে আসা যাওয়ার পথে আসামি মো. কাওছার মিয়া প্রেম নিবেদন করার উদ্দেশ্যে বিভিন্নভাবে উত্যক্ত করতো। তার মেয়ে এই বিষয়টি জানালে তিনি আসামির পরিবারবর্গকে জানান। কিন্তু আসামি আরও বেপরোয়া হয়ে তার মেয়ে মুক্তি রানীকে উত্যক্ত করতে থাকে।
ঘটনার দিন মুক্তি রানী বর্মন ২০২৩ সালের ২ মে সকাল ৯টা ৪৫ মিনিটে তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের উদ্দেশ্যে বের হয়। পরবর্তীতে মুক্তি রানী ওই দিন দুপুর ২টা ২০ মিনিটে বিদ্যালয় ছুটির পর প্রতিদিনের ন্যায় তার সহপাঠি ও বন্ধু বান্ধবদের সাথে বাড়ি পথে রওনা দেয়। পথিমধ্যে প্রেমনগর গ্রামের কংস নদীর পাড়ে পুরাতন ঈদগাহ মাঠের দক্ষিণ পার্শ্বে কাঁচা রাস্তার পাশে পৌঁছা মাত্রই আসামি কাওছার মিয়া পেছন দিক থেকে এসে তার হাতে থাকা দা দিয়ে মুক্তি রানী বর্মনের মাথা ও ঘাড় লক্ষ্য করে কোপায়। ফলে মুক্তি রানী বর্মনের মাথায় ও ঘাড়ে গুরুতর জখম হয়।
এমতাবস্থায় মুক্তি রানী মাটিতে পড়ে গেলে তার সহপাঠিসহ ঘটনাস্থলে আশেপাশের লোকজন তাকে গুরুতর আহত অবস্থায় বারহাট্টা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়া যায়। মুক্তির অবস্থা গুরুতর দেখে হাসপাতালে জরুরী বিভাগে কর্মরত ডাক্তার প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে, উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়।
গুরুতর অবস্থায় তার বাবা নিখিল চন্দ্র বর্মন, মুক্তি রানীর আরেক বোন দীপা রানী বর্মন ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের সহযোগিতায় দ্রুত ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়া যায়। হাসপাতালে কর্তব্যরত চিকিৎসক মুক্তি রানীকে মৃত ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপক্ষ দণ্ডবিধির ৩০২ ধারার অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হওয়ায় আসামির উপস্থিতিতে তাকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। মামলায় মোট ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।
মামলায় রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি হিসেবে ছিলেন পাবলিক প্রসিকিউটর মো. আবুল হাশেম এবং আসামিপক্ষের আইনজীবী (স্টেট ডিফেন্স) হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট দেলুয়ারা বেগম।
চয়ন দেবনাথ মুন্না/এমএএস