নীলফামারীর সৈয়দপুরে একটি স্কুলে ব্যতিক্রমী এক ঘটনা ঘটেছে। ক্লাসরুমে ঢুকে সরাসরি ক্লাস নিয়েছেন থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। শুধু ক্লাসই নয়, শিক্ষার্থীদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছেন নানা সামাজিক সমস্যা নিয়ে। বুধবার দুপুরে সৈয়দপুর সানফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজে এই ঘটনা ঘটে।

জানা গেছে, বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পরবর্তী ক্লাসের জন্য অপেক্ষা করছিল। ঠিক তখনই অধ্যক্ষের সঙ্গে ক্লাসরুমে ঢোকেন পুলিশের পোশাক পরা এক ব্যক্তি। প্রথমে সবাই বিস্মিত হয়ে ওঠে। পরে জানা যায়, তিনি সৈয়দপুর থানার ওসি ফইম উদ্দীন। শ্রেণিকক্ষে ঢুকেই ওসি বোর্ডে নিজের নাম ও মোবাইল নম্বর লিখে দেন। তিনি বলেন, তোমরা কেউ যদি বিপদে পড়ো, ইভটিজিংয়ের শিকার হও কিংবা বাল্যবিবাহ দেখতে পাও, তাহলে ভয় না পেয়ে এই নম্বরে কল দেবে।

শুধু ফোন নয়,  এসএমএস করলেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান ওসি। তিনি বলেন, চাইলে থানার নারী পুলিশ সদস্যের সঙ্গেও কথা বলতে পারবে। কারও সঙ্গে অন্যায় হলে চুপ করে থাকবা না।

ওসি ফইম উদ্দীন প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে ক্লাস নেন। সেখানে তিনি মোবাইল আসক্তি, বাল্যবিবাহ, নারী নির্যাতন, যৌন হয়রানি, মূল্যবোধ ও স্বাস্থ্যবিষয়ক নানা গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন। এক পর্যায়ে এক শিক্ষার্থী প্রশ্ন করে, গ্রামে যদি ১৮ বছরের নিচে কারও বিয়ে হয়, তখন কি ফোন করতে পারব? উত্তরে ওসি তখন বলেন, অবশ্যই। এগুলো আইনগত অপরাধ। তুমি আমাকে জানাবা।

স্কুলের ছুটির সময় ঘনিয়ে এলেও, শিক্ষার্থীরা তার কথা গভীর মনোযোগ দিয়ে শুনছিল। ক্লাস শেষে তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের ইভটিজিং এবং সামাজিক সমস্যা নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন এবং যে কোনো সংকটে তার সঙ্গে যোগাযোগ করার আহ্বান জানান।

সৈয়দপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফইম উদ্দীন ঢাকা পোস্টকে বলেন, অনেক অপরাধ থানায় পৌঁছায় না, ফলে অপরাধীরা শাস্তি পায় না এবং ভুক্তভোগীরা প্রতিবাদের সাহস হারিয়ে ফেলে। এজন্যই আমি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে সরাসরি শিক্ষার্থীদের সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছি। ইতোমধ্যে উপজেলার ১৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস নিয়েছি এবং আরও কিছু স্কুল-কলেজে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। 

সানফ্লাওয়ার স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মোখলেছুর রহমান জুয়েল এই উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, এটি শিক্ষার্থীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াবে এবং তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে দূরে রাখতে সহায়তা করবে।  

শরিফুল ইসলাম/এনএফ