কাপ্তাই হ্রদে পানি কমে নৌ যোগাযোগ ব্যাহত, দুর্ভোগে উপজেলাবাসী
সাধারণত শুষ্ক মৌসুম থেকেই কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর কমতে থাকে। যা গ্রীষ্ম মৌসুমে সর্বনিম্ন স্তরে এসে পৌঁছে। বর্তমানে কাপ্তাই হ্রদে পানির স্তর একেবারেই নিম্নস্তরে রয়েছে। এতে জেলার সঙ্গে উপজেলাবাসীর নৌপথে চলাচল কষ্টকর হয়ে দাঁড়িয়েছে। পাশাপাশি হ্রদের তলদেশ পলি জমে নৌপথগুলো আরো সংকীর্ণ হয়ে পড়েছে। ফলে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলে বেগ পেতে হচ্ছে।
ষাটের দশকে কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর গত ৬৫ বছরে পলি জমে কাপ্তাই হ্রদে নৌ রুটগুলোতে লঞ্চ ও ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচলে ভোগান্তি বেড়েছে। গ্রীষ্ম মৌসুমে হ্রদে পানি কমে তিন ঘণ্টার পথ যেতে যাত্রীদের সময় লাগছে পাঁচ ঘণ্টা। হ্রদে পানি কম থাকায় লঞ্চগুলোও যেতে পারছে না নির্ধারিত গন্তব্যে। এতে যেমন যাত্রীদের বেড়েছে ভোগান্তি, তেমনি বেড়েছে খরচ। সমস্যা সমাধানে স্থানীয়রা নদী খননের ওপর জোর দিয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
জেলার দশ উপজেলার মধ্যে সাতটি উপজেলায় নৌ চলাচল থাকলেও পাঁচ উপজেলায় সড়ক পথ না থাকায় চলাচলের একমাত্র মাধ্যম নৌপথ। ইতোমধ্যে বাঘাইড়ি, বিলাইছড়ি ও জুরাছড়ি উপজেলার সঙ্গে সরাসরি লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ছোট ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকায় উপজেলাবাসীদের যেতে হচ্ছে গন্তব্যে। দুই উপজেলায় লঞ্চ যেতে পারলেও সময় লাগছে বেশি। নাব্যতা সঙ্কটে লঞ্চ-বোট আটকে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় নষ্ট হচ্ছে। এতে খরচ ও সময় দুই বেড়েছে।
জুরাছড়ি উপজেলার বাসিন্দা আব্দুল মোমেন বলেন, আগে যেখানে রাঙামাটি থেকে সরাসরি জুরাছড়ি যাওয়া যেত, সেখানে এখন ছোট বোটে করে ভেঙে ভেঙে যেতে হয়। ফলে আগের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ সময় লাগে, পাশাপাশি যাতায়াত ব্যয়ও বেড়েছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি আরও বলেন, রাঙামাটি থেকে আগে যেকোন পণ্য উপজেলা সদর পর্যন্ত সরাসরি নিয়ে যাওয়া যেত। কিন্তু এখন সরাসরি পণ্য নিতে না পারায় পরিবহন খরচ বেড়ে পণ্যের দামও আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। এতে উপজেলাবাসীর জীবনব্যয়ও বেড়েছে।
বিলাইছড়ি উপজেলার বাসিন্দা খান সোবাহান মিয়া বলেন, অর্ধেক পথ ছোট বোটে অর্ধেক পথ হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছাতে হচ্ছে ইদানিং। জেলা সদর থেকে সরাসরি উপজেলায় যাওয়ার একমাত্র নৌপথটি পানি না থাকার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এই যোগাযোগ বন্ধ থাকার কারণে আমাদের জীবনযাপন ব্যয় থেকে শুরু করে যাতায়াত ব্যয় সবকিছুই বেড়ে গেছে। পাশাপাশি রাঙামাটি যাওয়া আসা করতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
সমস্যা সমাধানে নদীর তলদেশ খননের দাবি জানিয়ে রাঙামাটি নৌযান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক বিশ^জিৎ দে বলেন, কাপ্তাই হ্রদ সৃষ্টির পর থেকে আজ পর্যন্ত কখনো নদী খনন করা হয়নি। বর্ষাকালে পাহাড় থেকে নেমে আসা মাটি হ্রদের তলদেশে জমতে জমতে বিভিন্ন নৌপথে অসংখ্য ডুবোচর তৈরি হয়েছে। গরমকালে পানি শুকিয়ে গেলে অনেক উপজেলার সাথেই নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। যে কয়েকটি নৌপথে লঞ্চ চলাচল করে সেগুলোতেও অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয় যাত্রী, লঞ্চ চালক ও শ্রমিকদের। তাই বড় প্রকল্প না হলেও অন্তত ছোট প্রকল্পের মাধ্যমে হলেও কাপ্তাই হ্রদের নৌপথগুলো ড্রেজিং করারটা এখন খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে।
এই বিষয়ে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হাবিব উল্লাহ বলেন, প্রতি বছর যোগাযোগের যে সমস্যা হয় এটি সমাধানের জন্য একটি বড় উদ্যেগ হলো হ্রদ ড্রেজিং করা। হ্রদ ড্রেজিংয়ের একটি প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন আছে, আমরা আশা করছি খুব শীঘ্রই এটি বাস্তবায়নের পর্যায়ে এসে যাবে। ড্রেজিংয়ের কাজটি সম্পন্ন হয়ে গেলে হ্রদের নাব্যতা বাড়বে, তখন আর শুষ্ক মৌসুমে যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটবে না।
পানি কমে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে পাঁচ উপজেলার প্রায় তিন লাখ মানুষ।
মিশু মল্লিক/আরকে