শিশুর সঙ্গে ‘অতিকায়’ ষাঁড়ের দারুণ বন্ধুত্ব
রশি হাতে নিয়ে হাঁটছে তিন বছর বয়সী শিশু সুলাইমান। তার ঠিক পেছনে হাঁটছে বিশাল আকৃতির এক ষাঁড়। সে কখনো ষাঁড়টির পিঠে চড়ে, আবার কখনো মাথা চেপে ধরে আদর করে। শিশুটির ডর-ভয়ের পরিবর্তে এমন দৃঢ়তা আর গরুকে আয়ত্তে রাখার ক্ষমতা দেখে চমকে যায় গ্রামের মানুষ।
এমন চিত্র দেখা যায়, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সদর উপজেলার নরসিংসার ইউনিয়নের পয়াগ গ্রামে। শিশু সুলাইমানের সঙ্গী এই বিশাল ষাঁড়টি নেপালি গির জাতের।
বিজ্ঞাপন
সুলাইমানের বাবা মোহাম্মদ আলী একজন অভিজ্ঞ খামারি। দীর্ঘ ১৮ বছর ধরে তিনি কোরবানির পশু মোটাতাজা করছেন। তার খামারে এখন রয়েছে বাংলার বস, টাইগার ও নেপালি গির—এই তিন বিশাল আকৃতির গরু। এর মধ্যে বাংলার বসের ওজন ১ হাজার কেজির বেশি, টাইগারেরও কাছাকাছি, আর নেপালি গির ষাঁড়টির ওজন ৭২০ কেজি।
বিজ্ঞাপন
সম্প্রতি বিক্রি হয়ে যাওয়া ‘রাজাবাবু’ নামে ১২০০ কেজির একটি মহিষ ছিল এই খামারের অন্যতম আকর্ষণ। এখন গ্রামের আকর্ষণের কেন্দ্রে শিশু সুলাইমান ও তার খেলার সঙ্গী অতিকায় ষাঁড়টি।
খামারের কর্মচারী মো. সুমন মিয়া বলেন, বড় গরু বলেই ওদের দেখাশোনায় সময় ও যত্ন বেশি দিতে হয়। দিনে চারবার গোসল, তিনবার খাওয়ানো—ঘাস, ভুসি, বন, ছোকলা, সাইলেজ দিয়ে খাবার দেওয়া হয়। তিনি বলেন, খামারে ছিল ৫৩টি পশু, যার মধ্যে ৮টি বিক্রি হয়ে গেছে, বাকি গরুগুলোও বিক্রির জন্য প্রস্তুত।
মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার গরুগুলো খুবই শান্ত স্বভাবের। প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হয়েছে। কোনো ইনজেকশন, স্টেরয়েড ব্যবহার করিনি। বাংলার বসের দাম ১০ লাখ, টাইগার ৯ লাখ, আর নেপালি গির ষাঁড়টির দাম ধরা হয়েছে ৮ লাখ টাকা।
আরও পড়ুন
গরুগুলোর সৌন্দর্য ও শান্ত আচরণে মুগ্ধ হয়ে প্রতিদিনই জেলা ও জেলার বাইরের মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন মোহাম্মদ আলীর বাড়িতে।
সবচেয়ে বিস্ময়কর দৃশ্য তৈরি করে ছোট্ট সুলাইমান। গরুর সামনে তার উচ্চতা নেই বললেই চলে। তবুও সে গরুর পিঠে চড়ে, রশি ধরে টেনে হাঁটায়, কখনো মাথা চেপে ধরে আদর করে। আর আশ্চর্যজনকভাবে গরুটিও থাকে পুরোপুরি অনুগত। গ্রামের লোকজন বলছেন, এমন দৃশ্য আগে কখনো দেখিনি।
গ্রামের প্রবীণ হোসেন মিয়া বলেন, মোহাম্মদ আলী একজন সৎ ও ভালো মানুষ। তার খামারের গরুগুলো যেমন বড়, তেমনি শান্ত। আমাদের গ্রামের একটা গর্ব যেন এই খামার।
মাজহারুল করিম অভি/এএমকে