মাদারীপুরে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো এখন পলিথিন ও পাটখড়ির আদলে আবদ্ধ। মরিচা ধরে খসে পড়েছে চালের টিন। কোনো মতে পাটখড়ি ও পলিথিনের জোড়াতালি দিয়ে থাকছেন বসবাসকারীরা। বৃষ্টি হলেই ঘরের মধ্যে পানি ঢুকে যায়। এতে প্রায়ই অনিদ্রায় রাত কাটাতে হয় অসহায় পরিবারগুলোকে। তাদের দাবি, এ বর্ষার আগেই যেন অন্তত ঘরের টিনগুলো পরিবর্তন করে দেওয়া হয়। তবে অর্থ বরাদ্দ না পাওয়া পর্যন্ত কিছুই করার নেই বলে জানালেন মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাবের।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জায়গা-জমি না থাকায় ২০০৭ সালে সরকারি ঘরে মাথা গোঁজার ঠাঁই পায় মনি ফকির (৫০)। সদর উপজেলার কুনিয়া ইউনিয়নের চর দক্ষিণপাড়া এলাকায় রাস্তার পাশে নির্মিত সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরেই কেটেছে তার পরিবারের ১৮টি বছর। তবে বর্তমানে আশ্রয়নের ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পাকা মেঝে ভেঙে গেছে। টিনের চালা মরিচা ধরে ছিদ্র হয়ে গেছে। লোহার অন্য সরঞ্জামেও মরিচা ধরেছে। একটু বৃষ্টি হলেই ফুটো চাল চুইয়ে পানি পড়ে। তাই বৃষ্টির দিনে নির্ঘুম রাত কাটাতে হয় মনি ফকিরের পরিবারকে।

একই স্থানে ৭০ ঊর্ধ্ব ফুলমতির ঘরের একই অবস্থা। রাতের বৃষ্টিতে ঘরের মেঝেতে পুরো কাঁদা হয়ে গেছে। তাই রোদ উঠায় ঘরের টুকিটাকি জিনিসপত্র বাইরে শুকাতে দিয়েছে। এমন কোনো ঘর নেই যে, বৃষ্টি হলে ঘরে পানি না পড়ে। তাই কেউ কেউ ঘরের চালার সাথে পলিথিন দিয়ে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও করেছে। ফুলমতির ঘরের মতো প্রায় সবারই একই অবস্থা।

মনি ফকির জানান, মানুষের কাছ থেকে পাওয়া সাহায্য সহযোগিতায় চলে তার ৪ সদস্যের সংসার। জায়গা জমি কোনো কিছু না থাকায় ১৮ বছর আগে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে আশ্রয় পান তিনি। সেখানে থেকেই এক মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। দীর্ঘদিন ধরে ঘরটির চালায় মরিচা ধরে অধিকাংশ স্থানে ফুটো হয়ে গেছে। এখন বৃষ্টি হলেই ওই ফুটো দিয়ে ঘরের মধ্যে পানি পড়ে সব কিছু ভিজে যায়। না ঘুমিয়েই রাত পাড় করতে হয়। এই ঘরটি ছাড়া তাদের থাকার মতো আর কোনো জায়গা নেই। তাই ভাঙা চালায় পানি পড়া ঠেকাতে পলিথিন দিয়েছেন। এজন্য দ্রুত এই ঘরগুলো মেরামত করার জন্য সরকারের কাছে অনুরোধ জানান তিনি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে আশ্রয় নেওয়া লোকজন জানান, শুধু মনি ফকির আর ফুলমতির ঘরই নয়, এই প্রকল্পের জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করছে ৯০টি পরিবার। সংস্কারের অভাবে এ ঘরগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। নানা সমস্যায় জর্জরিত হলেও এসব ঘর মেরামতের কোনো উদ্যোগ নেই। ফলে আতঙ্কে দিন কাটছে বসবাসকারী পরিবারগুলোর। তাদের দাবি, ভাঙাচোরা ঘরের চালায় পলিথিন দিয়ে ফুটো বন্ধ করে কোনো রকম বসবাস করে আসছেন। অন্যত্র সরে যাওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় বাধ্য হয়েই পরিত্যক্ত ভাঙাচোরা ও অস্বাস্থ্যকর এ ঝুঁকিপূর্ণ ঘরে বসবাস করছে এসব পরিবার।

তবে শিগগিরই কোনো সুসংবাদ দিতে পারেনি সদর উপজেলা প্রশাসন। সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে অর্থের বরাদ্দ পেলেই সংস্কার করা হবে আশ্রয়ণের ঘরগুলো, এমনটাই আশ্বাস দিয়েছেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওয়াদিয়া শাবাব।

তিনি বলেন, আমি কুনিয়ার আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরগুলো পরিদর্শণ করে এসেছি। আপাতত এসব ঘরের জন্য কোনো বরাদ্দ নেই। ওপর মহলে চিঠি দেওয়া হয়েছে। আশা রাখি কিছুদিনের মধ্যেই টাকা বরাদ্দ পেলে ঘরগুলো মেরামত করা যাবে। যদি দু-চারটা ঘরের টিন নষ্ট হতো, তাহলে আমিই ব্যবস্থা করতে পারতাম। কিন্তু ওখানের প্রায় সব ঘরেই একই অবস্থা। তাই কিছুটা সময় লাগবে।

আশ্রয়ণ প্রকল্পে কবরস্থান, খেলার মাঠ, সমবায় সমিতির কার্যালয়সহ ৯টি টিনের ব্যারাক রয়েছে। প্রতিটি ব্যারাকে রয়েছে ১০টি করে কক্ষ। আবাসিক জমিসহ প্রতিটি ভূমিহীন ৯০টি পরিবারকে একটি করে কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। যেখানে ১২টি শৌচাগার ও চারটি গোসলখানা করা হয়েছিল।

আকাশ আহম্মেদ সোহেল/এমএএস