পঞ্চগড়ে বিপি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের রাজকীয় বিদায়
পঞ্চগড়ে চাকরি জীবনের শেষদিনে এক প্রধান শিক্ষককে রাজকীয় বিদায় দিয়েছেন সহকর্মী ও শিক্ষার্থীরা। ফুলসজ্জিত একটি ঘোড়ার গাড়িতে করে তাকে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৯ মে) বিকেলে পঞ্চগড় বিষ্ণু প্রসাদ (বিপি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) ছায়ফুল্লাহ্কে এভাবে বিদায় জানাতে দেখা যায়। অবসরে যাওয়া প্রধান শিক্ষক ছায়ফুল্লাহ্ পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলার বাসিন্দা।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার ছিল ছায়ফুল্লাহ্ এর চাকরি জীবনের শেষ কর্মদিবস। তাকে বিদায় জানাতে বিদ্যালয়ে ছুটে আসেন সাবেক শিক্ষার্থীরাও। বিদ্যালয় ভবন থেকে রাস্তায় থাকা ঘোড়াগাড়ি পর্যন্ত লালগালিচার দুইপাশে দাঁড়িয়ে থাকে শিক্ষার্থীরা। এসময় প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয় থেকে বের হয়ে আসতে ধরলে শিক্ষার্থীরা ফুল ছিটিয়ে করতালি দিয়ে স্বাগত জানায়। পরে ফুলসজ্জিত ঘোড়ার গাড়িতে করে তার ভাড়া বাসা পঞ্চগড় শহরের কায়েতপাড়া বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। এসময় ওই স্কুলের শত শত বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থী প্রিয় শিক্ষকের ঘোড়ার গাড়ির পেছনে শিক্ষকের বাড়ি পর্যন্ত যান। প্রিয় শিক্ষার্থী ও সহকর্মীদের এমন আয়োজনে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন ছায়ফুল্লাহ্।
বিজ্ঞাপন
প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) ছায়ফুল্লাহ্ বলেন, ১৯৯১ সালে ২৫ মে দিনাজপুর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে আমার চাকরি জীবন শুরু হয়। সেখান থেকে ১৯৯৪ সালে জুলাই মাসে বদলি হয়ে পঞ্চগড় বিষ্ণু প্রসাদ (বিপি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে আসি। বিপি স্কুল থেকে আবার ২০১২ সালের ৭ মে পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি হই। পরে ২০১৯ সালের ১৮ এপ্রিল আবার প্রিয় কর্মস্থল বিষ্ণু প্রসাদ (বিপি) সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে বদলি হই এবং ২০২৩ সালের ১৪ মে থেকে প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করে আসছি। আমার শিক্ষার্থীরা আমাকে যে এতো ভালোবাসে এটা আমি আগেও জানতাম। আমার শিক্ষকতা জীবনে এটাই বড় সার্থকতা। এমন বিদায় সংবর্ধনা পেয়ে আমি সত্যিই মুগ্ধ হয়েছি।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র প্রান্ত বলেন, আমি ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে স্যারকে পেয়েছি। আমি কোনোদিন দেখিনি স্যার আমাদের সাথে খারাপ আচরণ করেছে। স্যার সব সময় আমাদের সাথে বন্ধু সুলভ আচরণ করেছে। আমরা অনেক দুষ্টামি করেছি, কিন্তু স্যার আমাদের কখনো চড়া গলায় কথা বলেনি। স্যার আমাদের বুঝিয়েছে। স্যার এমন কিছু করে গেছে যে স্যারকে ভোলা যাবে না।
বিজ্ঞাপন
বিদ্যালয়ের শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, আমরা এমন একজন অভিভাবক পেয়েছিলাম যিনি আপাদমস্ত সৎ মানুষ। তার মনে সারাক্ষণি একটি বিষয় ছিল কি করে শিক্ষার্থীদের উন্নতি করা যায়। কি করে সহকর্মীদের উন্নতি হয়। সার্বক্ষণিক এই রকম সৎ মানুষ আমরা কখনো দেখিনি। শিক্ষার মান উন্নয়নে, প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নে তিনি সার্বক্ষণিক চেষ্টা চালিয়ে গেছেন। তিনি আমারও শিক্ষা গুরু ছিলেন। আমি তখন থেকে দেখেছি, একজন মানুষের জীবন যাপনে পরিবর্তনে তার অনেক ভূমিকা রয়েছে। তার সৎ উপদেশগুলো আমাদের অনেকের জীবনযাপনে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে এবং আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান অনেক উন্নতি হয়েছে। আরও কিছুদিন যদি আমরা স্যারকে পেতাম তাহলে আমরা হয়তোবা পঞ্চগড়ের এই স্কুলটিকে বাংলাদেশের আরও সর্বোচ্চ স্কুলে নিয়ে যেতে পারতাম।
এমএএস