বিএনপি নেতা এমদাদুল হক শরীফ

ঠাকুরগাঁওয়ে জমি দখলে বাধা দেওয়ায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজর আলীকে দেশীয় অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখমের অভিযোগ উঠেছে এমদাদুল হক শরীফ নামে এক বিএনপি নেতার বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় এমদাদুলকে আটক করে পুলিশ। পরে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয় তাকে।

বৃহস্পতিবার (২৯ মে) আদালতে তোলা হলে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এর আগে বুধবার দুপুরে ঠাকুরগাঁও পুলিশ লাইন্স-সংলগ্ন মুসলিমনগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ওই দিন রাতেই ফজর আলীর ছেলে আল মামুন (৩৮) বাদী হয়ে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় এমদাদুলসহ চারজনের নামে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন।

আসামিরা হলেন—একই এলাকার মৃত আশরাফ আলীর ছেলে এমদাদুল হক শরীফ (৩৬), মাজহারুল ইসলাম নয়ন (৪৩), জহিরুল ইসলাম লিটন (৪১) ও রাসেল আহম্মেদ (৪৩)।

অভিযুক্ত এমদাদুল হক শরীফ পৌর বিএনপির ১নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন।

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার দুপুরে মামুনদের দোকানঘর ও জমি জোরপূর্বক জবরদখল করতে আসেন এমদাদুল হক শরীফ তার সহযোগী মাজহারুল ইসলাম নয়ন, জহিরুল ইসলাম লিটন ও রাসেল আহম্মেদসহ অজ্ঞাত ১০-১৫ জনের একটি দল। এ সময় দোকানে বসে থাকা ফজর আলী বাধা দিতে গেলে এমদাদুলসহ তার লোকজন কোনো কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তার ওপর অতর্কিত হামলা চালান।

এ সময় এমদাদুল চাপাতি দিয়ে আঘাত করলে ফজর আলীর কপাল ও হাত গুরুতরভাবে জখম হন। এরপর মাটিয়ে পড়ে গেলে এমদাদুলের লোকজন লোহার রড ও লাঠি দিয়ে পেটাতে থাকেন। পরে ফজর আলীর চিৎকার চেঁচামেচিতে স্থানীয় লোকজন এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যান। পরে প্রশাসনকে খবর দেওয়া হলে পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে ফজর আলীকে উদ্ধার করে ঠাকুরগাঁও ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। এ ঘটনায় ফজর আলীর ছেলে আল মামুন সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিলে পুলিশ অভিযান চালিয়ে এমদাদুলকে আটক করে। পরে বৃহস্পতিবার (২৯ মে) আদালতে তোলা হলে বিচারক জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগীর স্বজনরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, বিএনপির বড় নেতা বলে জোরপূর্বক আমাদের দোকানঘর ও জমি দখলতে করতে আসেন। যেভাবেই হোক তার জমি লাগবেই। এর আগেও তিনি অন্যভাবে লোকজন নিয়ে আমাদের জমি দখল করতে আসেন। তিনি যদি জমির ভাগ পেতেন থাহলে কথা ছিল। কিন্তু কোনো কথা ছাড়াই তিনি বারবার আমাদের ওপর অন্যায়ভাবে জুলুম-নির্যাতন করে দোকানের স্যাটার লাগিয়ে তালা মেরে দেন। আমরা এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

ফজর আলীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে হাসপাতালে গেলে তিনি অসুস্থ থাকায় কথা বলতে পারেননি।

আল মামুন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বাইরে কাজে থাকার সুযোগে এমদাদুল হক শরীফ ও তার লোকজন জোরপূর্বক জমি ও দোকান দখল করতে আসেন। আমার বাবা বাধা দিতে গেলে তারা দা দিয়ে আমার বৃদ্ধ বাবাকে জখম করেন। বাবার সঙ্গে থাকা ৭ হাজার টাকও তারা নিয়ে পালিয়ে যান। আমি আমার বাবার ওপর হামলাকারীদের সুষ্ঠু বিচার চাই।

তবে অভিযোগ প্রসঙ্গে অভিযুক্ত মাজহারুল ইসলাম নয়ন, জহিরুল ইসলাম লিটন ও রাসেল আহম্মেদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে জেলা বিএনপির অর্থ সম্পাদক ও পৌর বিএনপির সভাপতি শরিফুল ইসলাম শরীফ বলেন, পৌর বিএনপির ১নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক এমদাদুল হক শরীফকের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। তিনি নাকি এক বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর করেছেন। তবে যদি সে এটা করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে দল কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজিত কুমার পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ফজর আলীকে মারধর করার অভিযোগে তার ছেলে থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেন। পরবর্তীতে অভিযান চালিয়ে এমদাদুল হক শরীফকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আর বাকি আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

রেদওয়ান মিলন/এএমকে