নিম্নচাপের প্রভাবে টানা দুই দিনের বর্ষণে জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে বরিশাল নগরীতে। শহরের উপকণ্ঠ এমনকি প্রধান প্রধান সড়কে জলাবদ্ধতা দেখা গেছে। এতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পড়েছে নগরবাসী। শুক্রবার (৩০ মে) শহরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। নগরজুড়ে এমন জলাবদ্ধতার কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সাধারণ ও শ্রমজীবী মানুষকে। নিচু বসতঘরে পানি উঠে তাদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা স্থবির হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, সঠিক ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, যা রয়েছে সেগুলো সময়মতো পরিচ্ছন্ন না করায় হাল্কা বৃষ্টিতেই শহর তলিয়ে যায়।

সরেজমিনে নগরীর প্রধান সড়ক কবি জীবনানন্দ দাশ সড়ক, নবগ্রাম রোড, বটতলা থেকে চৌমাথা সংযোগ সড়ক, আমির কুটির, অক্সফোর্ড মিশন রোড, কলেজ অ্যাভিনিউ, গোরস্তান রোড, সার্কুলার রোড, সাগরদি, রুপাতলি হাউজিং, ভাটিখানা, আমানতগঞ্জ, পলাশপুর, কাউনিয়ার পুরানপাড়া, সেকশন রোড, জিয়া সড়ক, কালুশাহ সড়ক, বৈদ্যপাড়া, কলেজ রোডসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে।

সিটি কর্পোরেশন এলাকার ৪ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা সেলিম বলেন, সামান্য বৃষ্টি হলেই ব্যাংকার্স কলোনীর মূল সড়কে হাঁটু পানি জমে থাকে। একদিন বৃষ্টি হলে পানি কমতে ১০ দিনেরও বেশি সময় লাগে। আমরা মারাত্মক ভোগান্তিতে আছি।

পলাশপুরের বাসিন্দা আল আমিন বলেন, এলাকাটি মূলত ঘিঞ্জি পরিবেশের। এখানে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। সামান্য বৃষ্টি হলেই সড়কের পানি ঘরে চলে আসে। আমাদের ঘরবাড়ির আসবাবপত্র ভিজে যায়। হাঁড়ি-পাতিল পানিতে ভেসে যায়। ভালো ড্রেন তৈরি না করা হলে আমাদের ভোগান্তি কমবে না।

কলেজ অ্যাভিনিউ এলাকার বাসিন্দা রাকিবুল ইসলাম বলেন, ড্রেন নির্মাণ হলেও তা এখনো কাজে আসছে না। পানি কোথায় নেমে যাবে? এর নির্গমনের পথ ড্রেনের চেয়ে উঁচু। 

তিনি বলেন, খালের চেয়ে নিচু স্তরে ড্রেন তৈরি করায় বৃষ্টিতে ড্রেনের পানি শহরের বাইরে যাওয়ার চেয়ে খালের পানি শহরে ঢোকে। পরিকল্পনা ছাড়া কাজ করায় আমরা যুগ যুগ ধরে ভোগান্তিতে আছি।

জলাবদ্ধতার কারণ কী?

আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক আনিসুর রহমান জানিয়েছেন, গত চব্বিশ ঘণ্টায় বরিশালে ৮৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

পুরাতন নথি বলছে, স্বাধীনতার পর বরিশাল শহরে ২৪টি খালের অস্তিত্ব ছিল। প্লাবন বা ভারি বর্ষণে এসব খাল দিয়ে দ্রুত পানি নির্গমণ হয়ে কীর্তনখোলা নদীতে নেমে যেত। কিন্তু নগর পরিকল্পনার অভাবে ২০০০ সালের পর নগরীর খাল, পুকুর ও জলাশয়গুলো একে একে ভরাট ও দখল হতে শুরু করলে জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী রফিকুল আলম বলেন, নগরের খাল ও জলাশয় ভরাট করে দখল আর অপ-উন্নয়নের পরিণাম হচ্ছে এই জলাবদ্ধতা। সামনে আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করবে।

তিনি বলেন, পানি ও বর্জ্য নিষ্কাশনে সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা খুবই দুর্বল। শহর বড় হচ্ছে, বাড়ছে মানুষ। কিন্তু কর্তৃপক্ষের সুদূরপ্রসারী কোনো পরিকল্পনাও নেই। খাল ও জলাশয়গুলো সংরক্ষণ ও খননের উদ্যোগ নেওয়ার পাশাপাশি মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এ সমস্যা সমাধান করা জরুরি।

বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, আমাদের পক্ষ থেকে চেষ্টা ক্রটি নেই। নিয়মিত ড্রেন ও নালাগুলো পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থায় আমাদের কোনো দুর্বলতা নেই। বর্তমানে কীর্তনখোলা নদীতে উঁচু জোয়ার থাকায় পানি নামতে সময় লাগছে।

সৈয়দ মেহেদী হাসান/আরএআর