পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপনের প্রধান উপকরণ কোরবানির পশু কেনার হিড়িক। গ্রামের হাটগুলোতে ক্রেতাদের পছন্দমতো কোরবানি কেনাবেচা চলছে পুরোদমে। তবে ময়মনসিংহ নগরীর চিত্র অনেকটাই ভিন্ন। তারা গরু লালন-পালনের ঝামেলা এড়াতে ঈদের এক বা দুইদিন আগে কিনতে চায় কোরবানির পশু। এ লক্ষ্যে নগরীর ক্রেতাদের চাহিদা পূরণে প্রস্তুত হয়ে উঠেছে ময়মনসিংহ নগরীর প্রধান কোরবানির হাট সার্কিট হাউজ পার্ক সংলগ্ন পশুর হাট। এই হাটে ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসতে শুরু করেছে ছোট, বড় ও মাঝারি সাইজের বিভিন্ন প্রজাতির গরু ও খাসি।

বুধবার (৪ মে) বিকেল ৫টায় ময়মনসিংহ নগরীর সার্কিট হাউজ সংলগ্ন কাচারি পার্ক এলাকা সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে নগরীর প্রধান কোরবানি হাটের এই চিত্র।   

এ সময় দেখা যায় ময়মনসিংহ সদর উপজেলার চরবিনপাড়া এলাকার কৃষক মো. আবু বকর (৪৫) শাহীপাল জাতের `লাল বাহাদুর’ নামক তিন বছর বয়সী বিশাল আকৃতির একটি ষাঁড় নিয়ে এসেছে এই হাটে। তিন লাখ টাকা এই লাল বাহাদুরের দাম হাকঁছেন তিনি। এ সময় গরুটি দেখতে চারপাশে ভিড় জমায় অনেক ক্রেতা। তবে গতবারের তুলনায় এবারের হাটে গরুর দাম একটু কম বলেও আক্ষেপ করেন এই কৃষক।

একই সময়ে জেলার ফুলপুর উপজেলার বউলা আজিমপুর গ্রাম থেকে কৃষক মো. সজীব মিয়া তিন বছর বয়সি ফ্রিজিয়ান ও শাহীপাল জাতের দুইটি গরু নিয়ে এসেছেন এই হাটে। এইবার প্রথম হাটে আসা এই গরু দুটির দাম হাঁকছেন ৫ লাখ টাকা করে। তবে ক্রেতার দরদামের ওপর প্রকৃত মূল্য নির্ধারণ হবে বলেও জানান সজীবের ভাই মো. মোফাজ্জল হোসেন।

এছাড়া ইতোমধ্যে হাটে উঠতে শুরু করেছে ছোট, বড় ও মাঝারি সাইজের বিভিন্ন প্রজাতির গরু ও খাসি। শুরুও হয়েছে কেনাবেচা। এতে এবারের হাটে ভালো কেনাবেচা হবে বলেও আশাবাদি নগরীর প্রধান এই হাটের ইজারাদার মো. জাহাঙ্গীর আলম জুয়েল। তিনি ঢাকা পোস্টকে জানান, আজ (বুধবার) বিকেল থেকেই জমতে শুরু হয়েছে হাটের কার্যক্রম। ইতোমধ্যে জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসছে ছোট, বড় ও মাঝারি সাইজের গরু ও খাসি। তবে এর মধ্যে ক্রেতাদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে ছোট ও মাঝারি গরুর। ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত এই হাটের কার্যক্রম চলবে- বলেও জানান এই ইজারাদার।

সূত্র জানায়, নগরীর সার্কিট হাউজ সংলগ্ন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের এই কোরবানির হাট এবার ইজারা মূল্য নির্ধারণ হয়েছে প্রায় ৩৫ লাখ টাকা। এর সঙ্গে বাজার ব্যবস্থাপনা ব্যায় ধরা হয়েছে প্রায় ৯ লাখ টাকা। এর বিপরীতে প্রতিটি কোরবানি ক্রয়-বিক্রয়ে শতকরা ইজারা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ ভাগ।  

ইজারায় রয়েছে বিশেষ ছাড়

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এই হাটে কোরবানি ক্রয়-বিক্রয়ে এবার বিশেষ ছাড়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এতে প্রতিটি গরু ক্রয়-বিক্রয়ে সিটি করপোরেশন দরপত্রে শতকরা ৫ শতাংশ ইজারা নির্ধারণ করলেও দেড় লাখ পর্যন্ত মূল্যেও প্রতিটি গরুর ইজারা নির্ধারণ করা হয়েছে ক্রেতা-বিক্রেতা ১৫০০ টাকা হারে। এর বেশি দেড় লাখের উর্ধ্বে যে কোন দামের গরুর ইজারা মাত্র ২০০০ টাকা করে ৪০০০ হাজার টাকা। সেই সঙ্গে দূরদুরান্ত থেকে আসা কৃষক বা খামারিদের জন্য রয়েছে থাকা-খাওয়ার বিশেষ ব্যবস্থা। আছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশাপাশি জাল টাকা শনাক্তের মেশিন। ফলে এই হাটে কোন ধরনের হয়রানি বা ভয় ও আতঙ্ক ছাড়াই নির্বিঘ্নে কেনাবেচা চলবে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত।

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, এবার কোরবানির ঈদে ময়মনসিংহ জেলায় পশুর চাহিদা ১ লাখ ৯২ হাজার ৮৮৯টি। এর বিপরীতে প্রস্তুত রয়েছে ২ লাখ ৫০ হাজার ৯৮৮টি পশু। এতে রয়েছে গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ি এবার জেলায় ৫৮ হাজার ৯৯টি পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। এর মধ্যে জেলার ১৩টি উপজেলায় মোট খামারির সংখ্যা ২৪ হাজার ৬৩৫টি।

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. ওয়াহেদুল আলম বলেন, এবারের ঈদে কোরবানির পশুর চাহিদা পূরণের পর অতিরিক্ত ৫৮ হাজার পশু উদ্বৃত্ত থাকবে। সেই সঙ্গে হাটগুলোতে নিয়মিত মনিটরিংয়ে থাকবে চিকিৎসক দল।

জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, এবার জেলায় কোরবানি বেচাকেনার জন্য স্থায়ী ও অস্থায়ী হাট বসেছে ১৫২টি। এর মধ্যে বড় হাটগুলোতে ৫২টি মেডিকেল টিম কাজ করবে, রয়েছে জাল টাকা শনাক্তকরণ মেশিনও। সেই সঙ্গে এসব হাটে ভারতীয় অবৈধ পশু প্রবেশ ঠেকানোসহ চুরি, ছিনতাই বা যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে সেনাবাহিনী, র‌্যাব ও পুলিশ সজাগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) কাজী আকতার উল আলম।
 
আমান উল্লাহ আকন্দ/আরকে