নোয়াখালীতে পশু কুরবানি করতে গিয়ে ২৪ ঘণ্টায় আহত ১২০
ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে দেশের অন্যান্য স্থানের মতো নোয়াখালী জেলাতেও কুরবানির পশু জবাইয়ের প্রস্তুতি ছিল তুঙ্গে। তবে কোরবানির দিন দেখা গেল এক ভিন্ন চিত্র— একদিনের জন্য কসাই সেজে নামেন অনেকেই, যাদের কোরবানির পশু জবাইয়ের অভিজ্ঞতা একেবারেই ছিল না। ফলে মাত্র ২৪ ঘণ্টায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় আহত হয়েছেন অন্তত ১২০ জন।
রোববার (৮ জুন) দুপুরে ঢাকা পোস্টকে এসব তথ্য নিশ্চিত করেন নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাজিব আহমেদ।
বিজ্ঞাপন
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে মোট ১৯৯ জন রোগী চিকিৎসা সেবা নিয়েছেন। এদের মধ্যে ডেলিভারি রোগী ছিলেন ১৫ জন। ও.পি.সি. পয়জনিংয়ের কারণে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮ জন। সড়ক দুর্ঘটনায় আহত হয়ে ভর্তি হয়েছেন ১৮ জন রোগী। পাতলা পায়খানার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন ১২ জন, আর সাধারণ মেডিসিন বিভাগে সেবা নিয়েছেন ২৬ জন।
তবে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো— ঈদের দিনে হঠাৎ কসাই সেজে মাংস কাটতে গিয়ে আহত হয়েছেন মোট ১২০ জন। হাত কাটা, পা কাটা কিংবা ছুরি ফসকে গিয়ে অন্যান্যভাবে আহত হয়ে তারা চিকিৎসা নিতে এসেছেন হাসপাতালে।
বিজ্ঞাপন
মো. হেলাল উদ্দিন নামে জেলা শহরের এক বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আহতদের বেশিরভাগই তরুণ ও মধ্যবয়সী ব্যক্তি। যারা সাধারণত চাকরি বা ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। কুরবানির দিন পরিবার বা পাড়ার সম্মান রক্ষার্থে কসাইয়ের ভূমিকা নিতে গিয়ে নিজেরাই পড়ে যান বিপদে। কারও হাতে ছুরি লেগেছে, কারও পা কেটে গেছে, কেউবা পশু জবাইয়ের সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন গুরুতরভাবে।
সদর উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মো. লিটন ঢাকা পোস্টকে বলেন, আগে কসাই আসত, এবার সময়মতো পাইনি। তাই নিজেরাই চিন্তা করলাম কাটব। কিন্তু হাত ফসকে ছুরি গিয়ে লাগে আঙুলে। এখন হাসপাতালে সেলাই নিতে হলো। হাসপাতালে এসে দেখি সব আমার মতো রোগী।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কর্মরত চিকিৎসকরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় ছুরি-কাঁচির আঘাতে আহত রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি। কিছু রোগীর আঘাত গুরুতর। বেশিরভাগকে প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা দিয়ে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) রাজিব আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সামাজিক বাস্তবতায় দেখা যাচ্ছে, অভিজ্ঞ কসাইয়ের অভাবে অনেক পরিবার বাধ্য হয়ে নিজেরাই পশু জবাইয়ে অংশ নিচ্ছেন। প্রতিবছর ঈদুল আজহার দিন পশু জবাই করার সময় অসাবধানতাবশত ধারালো অস্ত্রের আঘাতে বহু লোকজনের আহত হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ কাজটি কেবল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বা অভিজ্ঞ ব্যক্তিরাই করা উচিত। অন্যথায় শুধু নিজেরই নয়, আশপাশের মানুষকেও ঝুঁকিতে ফেলা হয়। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২০ জনকে সেবা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১৫ জনের মতো ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে অনেকেই ছাড়পত্র নিয়ে বাড়িতে ফিরেছেন।
হাসিব আল আমিন/আরএআর