কু‌ষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের করোনা পরীক্ষার একমাত্র পি‌সিআর ল্যাবের সকল যন্ত্রাংশ চু‌রি হয়ে গেছে। করোনা কমে যাওয়ায় প্রায় এক বছর আগে ল্যাবটির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। আনুমা‌নিক চার মাস আগে চু‌রি সংঘ‌টিত হয়। তবে চুরির বিষয়‌টি মাস খানেক আগে ‌জানতে পারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

চু‌রির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কু‌ষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবা‌সিক চি‌কিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. হোসেন ইমাম। 

আবারও করোনা প্রার্দুভাব নতুন করে মানুষকে ভাবাচ্ছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনা রোগী শনাক্ত হচ্ছে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনা প‌রীক্ষার একমাত্র পি‌সিআর ল্যাবের সকল যন্ত্রাংশ চু‌রির বিষয়‌টি নিয়ে মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈ‌রি হয়েছে। তারা দ্রুত পি‌সিআর ল‌্যা‌ব সচ‌ল করার দা‌বি জানিয়েছেন। 

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালের ১৬ এপ্রিল করোনা শনাক্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল প্রাঙ্গণে একটি একতলা ছোট ভবনে পি‌সিআর ল্যাব স্থাপন করা হয়। করোনা সংক্রমণ কমে যাওয়ার পর এক বছর আগে পি‌সিআর ল্যাবের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর হাসপাতাল সং‌শ্লিষ্ট দুইজন‌ কর্মচারীকে  ল‌্যাব দেখাশুনার দা‌য়িত্ব দেওয়া হয়। মা‌স খানেক আগে চু‌রির বিষয়‌টি জানতে পারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

চু‌রির ঘটনার ব‌্যাপা‌র‌টি স্বীকার করে কু‌ষ্টিয়া জেনারেল  হাসপাতালের আবা‌সিক চি‌কিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. হোসেন ইমাম বলেন, হাসপাতালের পি‌সিআর ল‌্যাবের সব যন্ত্রাংশ চু‌রি হয়ে গেছে। এটা এক‌দিনে হয়‌নি। ধারনা কর‌ছি গত চার মাস ধরেই চু‌রির ঘটনা ঘটেছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এক  মাস আগে বিষয়‌টি টের পেয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত ক‌মি‌টি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত ক‌মি‌টি তাদের রিপোর্টও জমা দিয়েছে। ল‌্যাব বন্ধের পর দেখাশোনার জন‌্য যাদের দা‌য়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদের চরম অবহেলা রয়েছে।  

কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও থানায় জমা দেওয়া অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, চুরির ঘটনায় গত ১২ মে ল্যাবে দায়িত্বরত কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজের মেডিকেল টেকনোলজিস্ট খাইরুল ইসলাম থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, গত ১০ মে তিনি কাজ শেষ করে দুপুরে বাড়িতে চলে যান। ১১ মে সরকারি ছুটি থাকায় ১২ মে ল্যাবে গিয়ে দেখতে পান, ল্যাবের পেছনের জানালার গ্রিল কাটা এবং ল্যাবের একটি পিসিআর যন্ত্র, একটি মনিটর, একটি পিসিআর ডেস্কটপ, একটি এসির ইনডোর অংশ ও ছয়টির আউটডোর অংশ নেই, যার সর্বমোট মূল্য আনুমানিক দাম ৩৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা।

কুষ্টিয়া মেডিকেলের অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান খান বলেন, চুরির ঘটনার পর পুলিশ প্রশাসনসহ মেডিকেল কলেজ ও জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকেরা সেখানে যান। বিষয়টি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালককে জানানোর পর থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। সেদিন ল্যাব থেকে আরও তিনটি পিসিআর মেশিনসহ অন্য দুই কক্ষে থাকা যন্ত্রাংশ মেডিকেল কলেজের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগে সরিয়ে নেওয়া হয়। আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে করোনা শনাক্তের জন্য যন্ত্রগুলো স্থাপন করা সম্ভব হবে বলে তিনি আশা করেন।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, এ ঘটনায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে কুষ্টিয়ায় আবারও নতুন করে কো‌ভিড আতঙ্ক ছড়াচ্ছে। গেল সপ্তাহে রাজধানী ঢাকা থেকে কুষ্টিয়ায় আসা দুইজন কো‌ভি‌ড পজিটিভ রোগী ২৫০ শয‌্যার জেনারেল হাসপাতালে চি‌কিৎসা নিয়েছেন। এছাড়া প্রতি‌নিয়ত জ্বর, স‌র্দি, কা‌শিতে আক্রান্ত ‌হয়ে ভর্তি হচ্ছেন রোগীরা। তাই এখন থেকেই সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। এরই মধ্যে  নড়েচড়ে বসেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। 

এ বিষয়ে হাসপাতালের আরএমও ডা. হোসেন ইমাম বলেন, করোনা আক্রান্ত রোগীর চিকিৎসায় ওয়ার্ডগুলো প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। ‌

কু‌ষ্টিয়া সি‌ভিল সার্জন অফিসের তথ্য মতে, ২০১৯ সা‌ল থেকে করোনার বিস্তার শুরু হয়। ২০২০ সালের ৮ মার্চ থেকে কুষ্টিয়া জেলায়  মারা গেছেন ৮৫৫ জন। আক্রান্ত হয়েছিলেন ৪ হাজারের মতো রোগী। সবচেয়ে বে‌শি করোনা রোগী মারা যান ২০২১ সালের জুলাই মাসে। সে মাসে ৩৪২ জন মারা গিয়েছিলেন। এর মধ্যে  শ্বাসকষ্ট ও অক্সিজেন সংকটে হাসপাতালেই অনেক জনের মৃত্যু হয়েছে। আগস্টের পর থেকে মৃত‌্যুর হার কমতে থাকে। এদিকে আবারো নতুন করে করোনা রোগীর শনাক্ত হচ্ছে। 

এ বিষয়ে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মে‌ডি‌সিন বিভাগের সহকারী রে‌জিস্ট্রার ডা. মাহফুজুর রহমান বলেন, পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা না থাকলেও চিকিৎসা দিতে সব‌ কিছু প্রস্তুতি আছে। আইসোলেশন ওয়ার্ডও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। গত সপ্তাহে ঢাকা থেকে কুষ্টিয়াতে আসা দুইজন করোনা পজিটিভ রোগী কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে চি‌কিৎসা নিতে এসেছিলেন। তাদেরকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। কিন্তু তারা ভর্তি না হয়ে চলে গেছেন। অবহেলার কারণে করোনা ছড়িয়ে মহামা‌রি আকার ধারণ করতে পারে। তাই জ্বর, সর্দি বা হাঁচিকাশি হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দেন এই চিকিৎসক। 

রাজু আহমেদ/আরএআর