মিয়া গোলাম পরওয়ার
ইসলামী আন্দোলনের শিক্ষা মতলিব ভাইয়ের জীবনে বাস্তব প্রতিফলন হয়েছে
জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, মৃত্যুকে সকল সময় স্মরণে রাখতে হবে। আমাদের মৃত্যুর সময় নির্দিষ্ট করা আছে, সেই সময় মৃত্যুবরণ করতে হবে। সেই সময় চলে আসবে। কখন আসবে সেটা বলা যায় না। বলা যায় না এখনই সেই মৃত্যুর সময় চলে আসবে। মৃত্যু থেকে আমাদের শিক্ষা হলো প্রতিটি মুহূর্ত মৃত্যুর জন্য নেক আমল করে প্রস্তুত থাকা।
বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) দুপুরে মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের সাবেক আমির দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিবের জানাজায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
বিজ্ঞাপন
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ইসলামী আন্দোলনের শিক্ষা মতলিব ভাইয়ের জীবনে বাস্তব প্রতিফলন হয়েছে। আমরা যা মানুষকে বলি নিজেদের জীবনে খুব কম প্রতিফলিত হয়। সদাচার, বিনয়, ভদ্রতা, ধৈর্য মানুষকে আপন করে নেওয়ার কৌশল, আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব। একটু খানি মিষ্টি হাসি ও ইসলামী আন্দোলন এই বই আর দেওয়ান সিরাজুল ইসলামের জীবন এক। তিনি মানুষকে খুব আপন করতেন, আমাদের মধ্যে এতো অসাধারণ গুণ ধরে রাখা কঠিন। কিন্তু মতলিব ভাই ছিলেন ব্যতিক্রম।
মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেন, ইসলামী আন্দোলনের চরম প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে, অনেক ঝড়ঝাপটা, মামলা হামলার মধ্য দিয়ে কত মঞ্জিল পার হয়েছেন তিনি। তার দিকে তাকিয়ে এই অঞ্চলের মানুষ ইসলামী আন্দোলনের দিকে অগ্রসর হয়েছে। অনেকেই বলেছেন আমরা অভিভাবককে হারিয়েছি। সবর করি, হায় আল্লাহ এতো মানুষের সাক্ষী, এতো মানুষের সুধারণা যার প্রতি, তুমি তার প্রতি তোমার রহমত বর্ষণ করো।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, রাসূল (সা:) বলেছেন, যখন কোন মানুষের মৃত্যু হয়ে যায় তখন তার কাছ থেকে আমলগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তখন তিনটি আমল থাকে, একটি হলো সদকায়ে জারিয়া, অন্যটি উপকারি শিক্ষা এবং অপরটি নেক সন্তান-সন্ততি।
জানাজার আগে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য ও ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির মো. সেলিম উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সিলেট মহানগরী আমির মো. ফখরুল ইসলাম, সিলেট জেলা আমির মাওলানা হাবিবুর রহমান, মৌলভীবাজার জেলা আমির ইঞ্জিনিয়ার মো. শাহেদ আলী, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট ফয়জুল করিম ময়ূন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান, খেলাফত মজলিসের জেলা সভাপতি মাওলানা ফখরুল ইসলাম, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জেলা সভাপতি মাওলানা আব্দুল কুদ্দুস, হবিগঞ্জ জেলা আমির হাজী মাওলানা মোখলেসুর রহমান, সুনামগঞ্জ জেলা আমির মাওলানা তোফায়েল আহমদ খান, সিলেট জেলা নায়েবে আমির হাফেজ মাওলানা আনোয়ার হোসেন খান, জেলা সেক্রেটারি জয়নাল আবেদীন, সিলেট মহানগরী সেক্রেটারি মো. শাহজাহান আলী, মৌলভীবাজার জেলা নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুর রহমান, সেক্রেটারি মো. ইয়ামির আলী, ঢাকার পল্টন থানা আমির শাহীন আহমদ খান, হবিগঞ্জ জেলা সেক্রেটারি কাজী মহসিন আহমদ, মাওলানা আহমদ বেলাল, আব্দুর রহিম রিপন ও মরহুমের বড় ছেলে দেওয়ান শরীফুজ্জামান চৌধুরী।
জানাজার নামাজে ইমামতি করেন সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার।
এর আগে বুধবার (১৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে সিলেট ইবনে সিনা হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের সাবেক আমির দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৮০ বছর। তিনি ৬ ছেলে ৪ কন্যা সন্তানের জনক। স্ত্রী, সন্তান, নাতি-নাতনিসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।
দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব দীর্ঘদিন মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সদস্য ও সিলেট আঞ্চলিক বিভাগের টিম সদস্য ছিলেন। দেওয়ান মতলিব ১৯৯১ সালে মৌলভীবাজার-৩ সংসদীয় আসন থেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন।
দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম মতলিব ১৫টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। তার মধ্যে ইসলামী সংগঠন ও আমরা, সাতান্ন বছর জামায়াতে ইসলামীতে কী দেখলাম, শান্তিপূর্ণ পরিবার, মৃত্যুর পর আমরা কোথায় যাব, রাষ্ট্রপ্রধান হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, একটুখানি মিষ্টি হাসি ও ইসলামী আন্দোলন , একটুখানি চোখের পানি ও ইসলামী আন্দোলন, কারাগারের স্মৃতি, কাবার পথে ইত্যাদি।
আশরাফ আলী/আরএআর