বাগেরহাটের অদেখা সৌন্দর্য তুলে ধরে সাড়া ফেলছেন কন্টেন্ট ক্রিয়েটর বিল্লাল
ক্যামেরা আর বাইক নিয়ে বাগেরহাটের পথে নামেন বিল্লাল চাকলাদার বাবু। পেশায় চাকরিজীবী হলেও নেশা তার প্রকৃতি আর সংস্কৃতির গল্প বলা। ফেসবুক পেজ ‘হৃদয়ের বাগেরহাট’-এর মাধ্যমে তিনি তুলে ধরছেন জেলার ৯টি উপজেলার নানা প্রান্তের দৃশ্য, গ্রামীণ জীবন আর ঐতিহ্য। একাই শুটিং, সম্পাদনা করেন, আর তার ভিডিওর ভাষা হয় আঞ্চলিক। বাবুর চোখে বাগেরহাট শুধু একটি জেলা নয়, ভালোবাসার অপর নাম। যার রূপ এখন ছড়িয়ে দিতে চান বিশ্বজুড়ে।
২০২৩ সালে যাত্রা শুরু করা বিল্লাল চাকলাদার বাবুর ‘হৃদয়ের বাগেরহাট’ পেজ ২০২৪ সালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তরুণ-বৃদ্ধ সবার মুখে এখন এই নাম। এখন চাকরি ছেড়ে পুরোদস্তুর মন দিয়েছেন কন্টেন্ট ক্রিয়েশনে।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, বাগেরহাট সদর উপজেলার রণজিৎপুর গ্রামে আট সদস্যের পরিবার নিয়ে বসবাস করেন বিল্লাল। শুরুতে পরিবার তার এই কাজকে তেমনভাবে সমর্থন করত না। কিন্তু যখন তার ভিডিওগুলো ভাইরাল হতে শুরু করে, তখন থেকেই পরিবারের সদস্যরা তাকে সমর্থন দিতে শুরু করেন।
মাত্র ১৮ হাজার টাকার ক্যামেরা দিয়ে শুরু করেছিলেন বাবু। এখন ব্যবহার করছেন ড্রোন ও আইফোন। লক্ষ্য বাগেরহাটের প্রতিটি গ্রাম ঘুরে তুলে ধরা, এরপর পুরো বাংলাদেশ।
বিজ্ঞাপন
বাগেরহাটের মেয়ে দীর্ঘদিন ঢাকাতে থাকা রুমা বেগম বলেন, আমি ছোটবেলা থেকে ঢাকাতে থাকি। কিন্তু হৃদয়ের বাগেরহাটের ভিডিওগুলো দেখে বাগেরহাটের প্রতি একটা টান অনুভব করি। তার আঞ্চলিক ভাষার কথা বলাটা এতটাই আন্তরিক যে মনে হয় নিজের ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলছি।
মালয়েশিয়া প্রবাসী আলী হাসান বলেন, আমি বিদেশে থাকি। দেশের মাটির গন্ধ পেতে মাঝে মাঝে মন ছটফট করে। হৃদয়ের বাগেরহাটের ভিডিওগুলো দেখে মনে হয় যেন বাগেরহাটের সবুজের মাঝে ফিরে গেছি। তার কাজ সত্যিই অসাধারণ।
স্থানীয় দর্শক সুলতান আহমেদ বলেন, হৃদয়ের বাগেরহাট পেজে আমাদের বাগেরহাটকে যেভাবে তুলে ধরা হয় তা সত্যিই প্রশংসনীয়। তার ভিডিওগুলো দেখে মনে হয় যেন বাগেরহাটের প্রতিটি কোণে নতুন করে প্রাণ ফিরে এসেছে।
বিল্লাল চাকলাদার বাবু বলেন, আমি বিল্লাল চাকলাদার বাবু, বাগেরহাটের রণজিৎপুর গ্রামের একজন সাধারণ মানুষ। ছোটবেলা থেকেই এই মাটি, খাল-বিল, সুন্দরবন আর মানুষের প্রতি টান কাজ করে। পেশা ভিন্ন হলেও নেশা একটাই বাগেরহাটকে তুলে ধরা। সময় পেলেই ক্যামেরা আর বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়ি গ্রামের পথে। আঞ্চলিক ভাষায় ভিডিও করি, যেন সবাই আমাদের বাগেরহাটকে প্রাণসহকারে দেখতে পারে। আমি বিশ্বাস করি, মাটির গন্ধ মেশানো ভাষাই সবচেয়ে আপন।
তিনি আরও বলেন, ২০২৩ সালে ‘হৃদয়ের বাগেরহাট’ শুরু করলে অনেকেই এটা পাগলামি ভেবেছিলেন, এমনকি পরিবারের কাছেও প্রথমে ভরসা পায়নি। কিন্তু আমি বিশ্বাস করতাম বাগেরহাটকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে হবে। ভিডিওগুলো ভালোবাসা পেয়ে স্বপ্ন ধীরে ধীরে বাস্তবে রূপ নিয়েছে। আপনাদের সমর্থনে এখন আমার সাথে আছে একশন ক্যামেরা, ড্রোন আর আইফোন। স্বপ্ন শুধু বাগেরহাট নয়, সারা দেশের সৌন্দর্য বিশ্ব দরবারে পৌঁছে দেওয়া। আয় শুধু টাকা নয়, এটা ভালোবাসা আর দায়িত্ববোধের ফল, যার কিছু ভাগ আমি গরিব ও দুঃস্থদের জন্য ব্যয় করি।
তিনি আরও বলেন, দেশ-বিদেশে যারা ‘হৃদয়ের বাগেরহাট’ দেখেন, কমেন্ট ও শেয়ার করেন, তারাই আমার শক্তি। আপনারা পাশে থাকলে এই স্বপ্ন পূরণ হবে, ইনশাআল্লাহ। ‘হৃদয়ের বাগেরহাট’ শুধু একটি ফেসবুক পেজ নয়, এটা বাগেরহাটের পরিচয় ও ভালোবাসার সেতুবন্ধন। বাবুর স্বপ্ন ও পরিশ্রম তরুণদের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছে।
শেখ আবু তালেব/আরকে