মিথ্যা প্রলোভনে যশোরের জাফর হোসেনসহ আরও কয়েকজনকে রাশিয়ায় নিয়ে যুদ্ধে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে মানবপাচার চক্রের চার সদস্যের বিরুদ্ধে।

বুধবার (২৫ জুন) যশোরের মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালে এই মামলা দায়ের করেন ভুক্তভোগী জাফরের ভাই বজলুর রহমান।

মামলার অভিযোগে বলা হয়, রাশিয়ার পক্ষে ইউক্রেন যুদ্ধে লড়াই করতে বাধ্য করা হয়েছে জাফর হোসেনসহ অন্যদের। তাদের রাশিয়ার আর্মি ক্যাম্পে আটকে রেখে প্রশিক্ষণের নামে প্রতারণা করে সরাসরি যুদ্ধে পাঠানো হয়েছে। বর্তমানে জাফর হোসেন ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক শহরের একটি বাঙ্কারে অবস্থান করছেন, যেখানে তিনি ড্রোন হামলায় গুরুতর আহত হন।

মামলার আসামিরা হলেন- নড়াইলের কালিয়া উপজেলার কলাবাড়িয়া পশ্চিম পাড়ার বাসিন্দা এবং ড্রিম হোম ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এসএম আবুল হাসান, ঢাকার দক্ষিণখান থানার আশকোনার শহিদুল ইসলামের মেয়ে ও আবুল হাসানের পার্টনার ফাবিহা জেরিন তামান্না, চট্টগ্রামের লোহাগড়া থানার মাঝেরপাড়ার মো. ইসহাকের ছেলে আলমগীর হোসেন দেলোয়ার ও ঢাকার নয়া পল্টনের মাহাতাব সেন্টার ভবনের ‘ভ্যাকেশন প্ল্যানার’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক শফিকুর রহমান।

বাদীর আইনজীবী ব্যারিস্টার কাজী রেফাত রেজওয়ান সেতু জানান, মামলার প্রাথমিক অভিযোগ আমলে নিয়ে যশোর মানবপাচার অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনাল-১ এর বিচারক ড. মো. আতোয়ার রহমান মামলাটি তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছেন।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেছেন, আসামি এসএম আবুল হাসান এবং ফাবিহা জেরিন তামান্না তার ভাই জাফর হোসেনকে রাশিয়ায় ক্লিনার অথবা শেফস অ্যাসিসেন্ট পদে মাসিক এক লাখ ২০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোট সাত লাখ ১০ হাজার টাকা নেন। বলা হয়, সরাসরি রাশিয়ায় যাওয়া সম্ভব। না তাই প্রথমে তাকে সৌদি আরবে নিয়ে যাওয়া হবে। এরপর সৌদি আরব থেকে ভিসা সংগ্রহ করে নেওয়া হবে রাশিয়ায়।

সে অনুযায়ী ২০২৪ সালের ১৭ অক্টোবর অভিযুক্তরা জাফর হোসেনসহ ১০ জনকে রাশিয়ায় ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভনে সৌদি আরবে পাঠায়। সেখান থেকে তাদের গ্রহণ করেন আসামি শফিকুর রহমান। সেখানে দুই মাস থাকার পর তাদের রাশিয়ার সেইন্ট পিটার্সবার্গে নিয়ে যান শফিকুর রহমান। রাশিয়ায় যাওয়ার পর অপর আসামি আলমগীর হোসেন দেলোয়ারসহ অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা তাদের গ্রহণ করে নিজেদের হেফাজতে রাখেন।

এরপর আলমগীর হোসেন দেলোয়ার এবং তার সঙ্গীরা তাদের জানান, আর্মি ক্যাম্পে ক্লিনার বা শেফস অ্যাসিস্টেন্ট হিসেবে কাজ করার আগে সবাইকে আর্মি ক্যাম্পে ২০ দিনের ট্রেনিং সম্পন্ন করতে হবে। একথা বলে তারা জাফর হোসেনসহ ১০ জনকে রাশিয়ার একটি আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে যান। সেখানে যাওয়ার পর জাফর হোসেনসহ অন্যরা জানতে পারেন, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে রাশিয়ার পক্ষে অংশগ্রহণ করাতে ২০২৬ সালের ৭ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ বছরের জন্য জনপ্রতি ১৪ হাজার ডলারে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন আসামি আলমগীর হোসেন দেলোয়ার ও শফিকুর রহমান। ফলে তারা রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধ করতে বাধ্য হন। 

বিষয়টি জানতে পেরে নিজের জীবন রক্ষার্থে আকরাম হোসেন নামে এক যুবক কৌশলে আর্মি ক্যাম্প থেকে পালিয়ে যান এবং পরে তিনি বাংলাদেশে ফিরে আসেন। এরপর জাফর হোসেনসহ অন্যরা রাশিয়ার আর্মির নির্যাতনের কারণে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বাধ্য হন। 

জাফর হোসেন বর্তমানে ইউক্রেনের ডোনেৎস্ক শহরের একটি যুদ্ধক্যাম্পের মাটির নিচের বাঙ্কারে অবস্থান করছেন। সেখানে ইউক্রেনের ড্রোন হামলায় তার ডান পায়ের পাঁজর ও উরুতে বোমার স্প্লিন্টার বিদ্ধ হলে তিনি গুরুতর আহত হন। হাসপাতালে এক মাস চিকিৎসা শেষে পুনরায় তাকে যুদ্ধক্ষেত্রে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। সর্বশেষ জাফর হোসেনের সঙ্গে সোহান মিয়া নামে এক যুবক গত ২০ জুন ড্রোন হামলায় নিহত হয়েছেন। বিষয়টি হোয়াটসঅ্যাপে ভয়েস মেসেজের মাধ্যমে ভাই বজলুর রহমানকে জানিয়ে তাকে দেশে ফিরিয়ে আনার জন্যে আকুতি জানান জাফর হোসেন।

এমএন