ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নে বেশ কয়েকটি ভাঙাচোরা রাস্তায় চলাচলে দুর্ভোগের শিকার হতেন শিশু-শিক্ষার্থী, বৃদ্ধ, রোগী, পথচারীরা। এ রাস্তাগুলোতে যানবাহন চলাচল অনেকটাই অসম্ভব ছিল। গ্রামবাসীর কাছে এই রাস্তাগুলো ছিল প্রতিদিনের দুর্ভোগের নাম। স্থানীয়দের চলাচল ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদের দুর্ভোগ কমাতে  নিজ অর্থায়নে সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামের কাঁচা রাস্তায় ইট ও মাটি ফেলে মেরামত করে দিয়েছেন বিশিষ্ট্য ব্যবসায়ী ও বিএনপি নেতা মীর জাহিদ হাসান।

শনিবার (২৮ জুন) বিকেলে আকচা ইউনিয়নের বন্দর পাড়া, মুন্সিপাড়া, বকসেরহাট, শিমুলতলা ও চৌধুরীপাড়াসহ বেশ কয়েকটি গ্রামের ভাঙ্গাচোরা রাস্তাগুলো গ্রামবাসীদের নিয়ে তিনি মেরামত করে দেন। মীর জাহিদ হাসান আকচা ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের বিএনপির সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন। রাস্তাটি গ্রীষ্মকাল ও বর্ষাকালে সামান্য বৃষ্টি হলেই এক হাঁটু কাদা জমে। তখন যানবাহন তো দূরের কথা, হেঁটে চলাচলও বিপদজনক হয়ে পড়ে। যা প্রতিনিয়ত সৃষ্টি করছে জনদুর্ভোগের।

ওই ইউনিয়নের ৪, ৫, ৬, ১, ২ ওয়ার্ডের প্রায় সাড়ে আট কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বড় বড় খানাখন্দকের সৃষ্টি হয়ে পানি জমে থাকে। এতে রাস্তাগুলোতে চলাচলকারী অটো ও সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন অর্ধশতাধিক স্কুল-কলেজপড়ুয়া ছাত্র-ছাত্রী যাতায়াত করে। এই রাস্তাটি নিয়ে বিপাকে পড়েছিল স্থানীয় ব্যবসায়ী ও পথচারীরাও।

জনসাধারণের ভোগান্তি লাগবে মীর জাহিদ হাসান রাস্তাগুলো মেরামতের উদ্যোগ নেন। তিনি গত কয়েক দিন ধরে ইটভাটা থেকে ইটের রাবিশ ও মাটি কিনে রাস্তার বড় বড় খানাখন্দকে ফেলে মেরামত করছেন। তার এই কাজে সহযোগিতা করছেন গ্রামের লোকজনও। গত এক সপ্তাহ ধরে তিনি গ্রামবাসীদের নিয়ে রাস্তায় ইট ও মাটি ফেলছেন।

গ্রামবাসীরা জানান, রাস্তায় বড় বড় খানাখন্দক সৃষ্টি হওয়ায় তাদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গাড়ি চালাতে হতো। এতে তাদের খুব কষ্ট হতো। বিএনপি নেতা মীর জাহিদ হাসান তার নিজের পকেটের টাকা দিয়ে রাস্তায় ইট ও মাটি ফেলে দেওয়ায় তাদের খুবই উপকার হয়েছে।

সড়কে চলাচলকারী মুন্সিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইসরাফিল, সমসের আলী, মকবুল, হাসান রাস্তাটিতে প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করেন ৩৫০০ মানুষ। জনদুর্ভোগ নিরসনে বিএনপি নেতা জাহিদ ও এলাকার লোকজন মিলে রাস্তাটি মেরামত করা হয়। এখন এ এলাকার মানুষ রাস্তাটিতে ঝুঁকি মুক্তভাবে চলাচল করতে পারবে।

গাড়িচালক বাবুল বলেন, এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল করার সময় প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটতো। বর্তমানে যে কাজ হয়েছে এখন দুর্ঘটনা কমে আসবে বলে আশা করি। সবুজ নামে স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এই রাস্তা দিয়ে চলাচল করা খুব কষ্টকর ছিল। জাহিদ ভাই রাস্তাটি সংস্কার করে যাতায়াতের উপযোগী করে তুলেছে। এজন্য আমরা অনেক খুশি।

বিএনপি নেতা মীর জাহিদ হাসান ঢাকা পোস্টকে বলেন, আকচা ইউনিয়নের কয়েকটি রাস্তা দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হতো। স্কুল-কলেজসহ এলাকার মানুষজন অনেক কষ্ট করে চলাচল করতো। বিশেষ করে রোগীদের সমস্যা হতো। অনেক সময় কাঁদাপানির জন্য বড় গাড়ি গ্রামে আসতে চাইতো না। বর্ষাকালে রাস্তাগুলোর অবস্থা আরও খারাপ হয়। কাঁদা পানিতে যাতায়াত করা যায় না।

তিনি আরও বলেন, তাই গ্রামবাসীদের নিয়ে  নিজ অর্থায়নে ইট, মাটি ও বালু ফেলে ভাঙাচোরা রাস্তাগুলো মেরামতের করে দিচ্ছি। যাতে  শিক্ষার্থী ও এলাকার লোকজন যাতায়াত করতে পারে।

ভাঙ্গাচোরা রাস্তাগুলোর ব্যাপারে আকচা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান শিমলা রানী বলেন, ভাঙাচোরা রাস্তাগুলো মেরামতের জন্য প্রকল্প আকারে সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠানো হবে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু হবে। তবে কেউ যদি নিজ ইচ্ছায় সাময়িক সংস্কার করে মানুষের দুর্ভোগ কমাতে এগিয়ে আসে সেক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষে থেকে এমন মহৎ উদ্যোগকে স্বাগত জানাই।

এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মামুন বিশ্বাস ঢাকা পোস্টকে বলেন, গ্রামের কাঁচা রাস্তায় কারো কাজ করার সুযোগ নেই। তবে কেউ যদি ব্যক্তি উদ্যোগে জন-দুর্ভোগ লাগবে কাজ করে থাকেন তা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।

রেদওয়ান মিলন/আরকে