চাঁদপুর শহরের মীর শপিং কমপ্লেক্সে অবস্থিত কাচ্চি ডাইনিংয়ে অভিযান চালিয়ে ৮০০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ জুলাই) দুপুরে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চাঁদপুরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান জরিমানার এই আদেশ দেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ অনুযায়ী প্রশাসনিক ব্যবস্থা হিসেবে উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ছাড়া বাদামের শরবত পাওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে এই জরিমানা করা হয়।

এর আগে, এক ভোক্তার কাচ্চির প্লেটে খাসির পরিবর্তে গরুর মাংস দেওয়ার অভিযোগ ওঠে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে। এ নিয়ে একটি ভিডিও সমাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ব্যাপক ভাইরাল হয়। ওই ভিডিওতে দেখা যায়, আরিয়ান হোসাইন রাকিব নামে একজন ভোক্তা তিন বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে কাচ্চি ডাইনিংয়ে খেতে যান। তাদের চারজনের কাচ্চির প্লেটে খাসির সঙ্গে গরুর মাংস পাওয়া যায়। বিষয়টি তিনি ওয়েটারকে জানালে, ওয়েটার রেগে গিয়ে প্রথমেই ভিডিও অফ করতে বলেন। এরপর দায়িত্বশীল একজন এসে তিনিও রুঢ় আচরণ করেন।

আরিয়ান হোসাইন রাকিব এ সংক্রান্ত অনেকগুলো ভিডিও পোস্ট করে তিনি লেখেন, ‘কাচ্চি ডাইনিংয়ে গিয়ে হতাশ! আমরা অর্ডার করি দুইটা খাসির কাচ্চি, অনেক ভিড় থাকায় এক ঘণ্টা লেট করে কাচ্চি আসে। তিনশ টাকা প্লেট হিসেবে কাচ্চির পরিমাণ ও মাংসের সাইজ ঠিকঠাকই ছিল। বিপত্তি বাধে খাওয়ার সময়, এক প্লেট কাচ্চিতে দুইটা চুল, আরেক প্লেটে একটা চুল। খাওয়া শুরু করার পর বুঝতে পারি, মাংস দুই পিসের মধ্যে এক পিস গরু আরেক পিস খাসি, শুধু আমার প্লেটে না আমরা এক টেবিলে চারজন বসছি সবারটাতেই সেইম। ওখানে উপস্থিত সবাই আমার হাতের মাংসটা যে গরুর সেটা বলেছে, কিন্তু ম্যানেজারের দাবি 'এখানে বিফ এলাও না। ওয়েটারদের ব্যবহার নিয়ে আর কিছু বললাম না। খাবারের স্বাদ কোনো রকম।’

আমরা আশা করব, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয় বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন। কেউ নিয়ম-নীতি মেনে সততার সঙ্গে ব্যবসা করলে চাঁদপুরবাসী তাকে সহযোগিতা করবে। তবে চাঁদপুরের মানুষদের আবেগ নিয়ে কেউ যেন প্রতারণা না করে।

এ বিষয়ে আরিয়ান হোসাইন রাকিব বলেন, ‘তারা (কাচ্চি ডাইনিং) কাচ্চিতে খাসির মাংসের সঙ্গে গরুর মাংস মিশ্র করে বিক্রয় করে থাকেন। আমরা খাওয়া-দাওয়াকালে এরকম পেয়েছি।’

এ বিষয়ে কাচ্চি ডাইনিং তাদের ফেসবুকে লেখেন, ‘সম্প্রতি আমাদের প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে কিছু বিভ্রান্তিকর ও ভিত্তিহীন অভিযোগ সামাজিক মাধ্যমে ছড়ানো হচ্ছে, যা আমাদের ধর্মীয় মূল্যবোধ, খাদ্য নিরাপত্তা ও ব্যবসায়িক নৈতিকতার পরিপন্থী। প্রথমত, আমরা পরিষ্কারভাবে জানাচ্ছি, চাঁদপুর কাচ্চি ডাইনিং-এর মেনুতে কোনো বিফ (গরুর মাংস) আইটেম নেই। আমরা শুধুমাত্র খাসির কাচ্চি পরিবেশন করে থাকি।’

‘দ্বিতীয়ত, আমাদের সকল খাদ্য হালাল এবং বিএসটিআই অনুমোদিত উপকরণে প্রস্তুত করা হয়। তৃতীয়ত, আমরা বিশ্বাস করি স্বচ্ছতা আমাদের শক্তি। এজন্য আমাদের কিচেন সকলের জন্য উন্মুক্ত। কেউ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে যে কোনো সময় রান্নাঘর ভিজিট করতে পারেন।’

‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, হালালভাবে ব্যবসা করলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার রহমতে সকল বাধা অতিক্রম করা সম্ভব। দুঃখজনক হলেও সত্য, একটি কুচক্রী মহল আমাদের সুনাম ও জনপ্রিয়তা দেখে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমরা আইনগত দিকগুলোও গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছি। সবাইকে অনুরোধ করবো, ভুল তথ্য শেয়ার না করে সত্য যাচাই করুন। আপনাদের দোয়া ও ভালোবাসায় চাঁদপুর কাচ্চি ডাইনিং সামনে এগিয়ে যেতে চায়, ইনশাআল্লাহ। বিশ্বাস রাখুন, আমরা খাবারে নয় প্রতিটি বিশ্বাসে গড়ি ভালোবাসা।’

এ বিষয়ের কাচ্চি ডাইনিংয়ের কতৃপক্ষ মাসুম বলেন, দুঃখজনক হলেও সত্য, একটি কুচক্রী মহল আমাদের সুনাম ও জনপ্রিয়তা দেখে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এসব মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কর্মকর্তারা এসেছেন। তারা এ ধরনের কোনো সত্যতা পায়নি। আমরা জেলা প্রশাসককে বিষয়টি জানিয়েছি। প্রয়োজনে আইনগত ব্যবস্থা নেবো।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর চাঁদপুরের সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল ইমরান বলেন, ওই ভিডিওটি আমাদের নজরে আসলে তাদের প্রতিষ্ঠানটিতে অভিযান চালাই। কাচ্চিতে খাসির মাংসের সঙ্গে গরুর মাংস মিশ্র করা কিছু পাওয়া যায় নাই। তবে উৎপাদন ও মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ ছাড়া বাদামের শরবত পাওয়ায় কাচ্চি ডাইনিংকে ৮০০০ টাকা জরিমানা করা হয়।

প্রসঙ্গ, চাঁদপুর শহরের জেএম সেনগুপ্ত রোডে অবস্থিত মীর শপিং কমপ্লেক্সের ৩য় তলায় ‘কাচ্চি ডাইনিং’ গত বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই ২০২৫) নিজস্ব বৈশিষ্ট্য নিয়ে উদ্বোধন করা হয়।

আনোয়ারুল হক/এএমকে