নওগাঁর সাপাহারে মামুনুর রশিদ (৩২) নামে এক কৃষককে মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে থানার ওসির বিরুদ্ধে। জমি সংক্রান্ত বিরোধে প্রতিবেশীকে সুবিধা পাইয়ে দিতে মোটা অংকের বিনিময়ে ওসি আব্দুল আজিজ এ কাজ করেছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীর পরিবারের। 

গত শুক্রবার (৪ জুলাই) মধ্যরাতে আকস্মিকভাবে পুলিশ পাঠিয়ে উপজেলার পাতাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব কলমুডাঙ্গা (সাঁওতালপাড়া) গ্রাম থেকে ওই কৃষককে গ্রেপ্তার করা হলে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। 

সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে জানা যায়, পাতাড়ী ইউনিয়নের পূর্ব কলমুডাঙ্গা (সাঁওতালপাড়া) গ্রামের আলম মৌলভী নামে এক প্রতিবেশীর সঙ্গে জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ চলে আসছিল কৃষক মামুনের পরিবারের। প্রায় তিন মাস আগে পুলিশ মামুনের খোঁজে তার বাড়িতে যায়। ওই সময় মামুনকে না পাওয়ায় তার পরিবারকে বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেওয়া হয়। এরই মধ্যে শুক্রবার (৪ জুলাই) মধ্যরাতে বাড়ির দরজা ভেঙে আকস্মিকভাবে মামুনকে ধরে নিয়ে যায় পুলিশ। পরবর্তীতে পুলিশ মামুনকে মাদক মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠায়। 

মামলার এজাহার ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ৬ এপ্রিল রাত ১১টায় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উপজেলার কলমুডাঙ্গা-দিঘিরহাট আঞ্চলিক সড়কের কলমুডাঙ্গা এলাকায় সাপাহার থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিলন কুমার সিংহের নেতৃত্বে একটি সঙ্গীয় ফোর্স মাদকবিরোধী অভিযান চালায়। ওই সময়ে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে সেখান থেকে পালিয়ে যান মামুন এবং তার ডান হাতে থাকা কালো রংয়ের একটি ব্যাগ ফেলে রেখে যান। পুলিশ ফেলে যাওয়া ওই ব্যাগ থেকে ৬০০ পিস ট্যাপেন্টাডল ট্যাবলেট উদ্ধার করে। উদ্ধারকৃত ট্যাপেন্টাডল ঘটনার দুই প্রত্যক্ষদর্শীকে টর্চ লাইটে দেখিয়ে জব্দ তালিকায় সাক্ষ্য নেওয়া হয়। এরপর এ ঘটনায় ৭ এপ্রিল ওই থানায় মামুনের বিরুদ্ধে একটি মাদক মামলা করা হয়। এ ঘটনার প্রায় ৩ মাস পর শুক্রবার (৪ জুলাই) মধ্যরাতে মামুনের বাড়িতে অভিযান চালিয়ে পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী মামুনের স্ত্রী সামসুন নাহার বলেন, এপ্রিল মাসের প্রথম দিকে আমাদের বাড়িতে একবার পুলিশ এসে আমার স্বামীর খোঁজ করেছিল। ওই সময়ে স্বামী বাসায় ছিলেন না। থানা থেকে আসা এসআই রেজওয়ান আমাদের মোবাইলগুলো কেড়ে নিয়ে কারণ না জানিয়েই গালিগালাজ করেছিল। পরে হুমকি দিয়ে ফোন ফেরত দিয়ে যায়। শুক্রবার (৪ জুলাই) মধ্যরাতে পুলিশ আমাদের বাড়িতে আবারও আসে এবং দরজা ভেঙে প্রবেশ করে। মামুন তখন ঘুমাচ্ছিল। তারা মামুনকে কোনো কিছু জিজ্ঞেস না করেই ঘুম থেকে উঠিয়ে গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে থানায় গিয়ে শুনি আমার স্বামী নাকি মাদক ব্যবসায়ী, এই কারণে তারা তাকে গ্রেপ্তার করে আনছে। আমার স্বামী কোনো দিন বিড়ি সিগারেট পর্যন্ত খায়নি। আমার স্বামী মাদক ব্যবসায়ী হতে পারে না। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। 

ভুক্তভোগী মামুনের বাবা তাজুল ইসলাম তাজেল বলেন, দীর্ঘদিন যাবত আমার প্রতিবেশী আলম মৌলভীর সঙ্গে বাড়ির পাশের একটি জমি নিয়ে বিরোধ চলছিল। এ ঘটনায় তারা থানায় অভিযোগ জানালে পুলিশ আলমের সঙ্গে সমঝোতা করতে আমাকে বার বার চাপ প্রয়োগ করে। এতে ব্যর্থ হলে তারা ওসিকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে আমার ছেলেকে মাদক মামলার আসামি বলে গ্রেপ্তার করে।

এই মামলার জব্দ তালিকার সাক্ষী পাতাড়ী ইউনিয়নের কলমুডাঙ্গা গ্রামের ইয়াহিয়া মন্ডলের ছেলে আব্দুল খালেক বলেন, ওইদিন রাতে আমার সেচ পাম্প থেকে একজন পানি নিচ্ছিলেন। যে লোক পানি নিচ্ছিলেন তার অটোরিকশা রাস্তায় দাঁড় করানো ছিল। হঠাৎ করেই লক্ষ্য করি অটোরিকশার পাশে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে, তার পেছনে পুলিশের গাড়ি দাঁড় করানো। অটোরিকশার কাছে গেলে পুলিশ আমাকে ডাক দেয়। তখন আমি পুলিশের কাছে এগিয়ে যাই। তখন দেখি একজন পুলিশ সদস্য লেখালেখি করছে। কাগজে আমার থেকে সাক্ষর নিয়েছে।

আরেক সাক্ষী রাকিব বলেন, পুলিশ সই না করলে আমার নামে মাদকের মামলা দেবে বলে ভয় দেখায়। বাধ্য হয়ে সই দিই। মাদক ফেলে কারও পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আমার নজরে পড়েনি।

এ বিষয়ে অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া উপ-পরিদর্শক (এসআই) মিলন কুমার সিংহ বলেন, মামুন আগে থেকেই মাদকের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। তাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়নি। ট্যাপেন্টাডল উদ্ধারের সময় মামুন পালিয়ে যাওয়ার দৃশ্য সামনে থেকে যারা দেখেছে তাদেরকেই জব্দ তালিকায় সাক্ষী করা হয়েছে। এখন হয়তো চাপের মুখে সাক্ষীরা মিথ্যা কথা বলছেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে সাপাহার থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল আজিজ বলেন, অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া এসআই যে সমস্ত তথ্য প্রমাণ পেয়েছেন তার ভিত্তিতেই মামুন মাদক মামলায় আসামি এবং গ্রেপ্তার হয়েছে। প্রতিপক্ষের থেকে টাকা নিয়ে তাকে মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন।

মনিরুল ইসলাম শামীম/আরএআর