শরীয়তপুরে পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে দৃষ্টিনন্দন বাড়ি নির্মাণ করছেন ঈমান ঢালী নামে এক মুদি দোকানি। প্রত্যন্ত গ্রামে রঙ-বেরঙের পরিত্যক্ত বোতল দিয়ে বাড়ির নির্মাণ করতে দেখে এলাকায় শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনা। বাড়িটির কাজ চলমান থাকলেও ইতোমধ্যে এর সৌন্দর্য নজর কেড়েছে সবার। অনেকে মনে করছেন, প্রত্যন্ত গ্রামের একজন মুদি দোকানির এমন চিন্তা পরিবেশবান্ধব দেশ গড়তে নতুন বার্তা দেবে। 

সম্প্রতি শরীয়তপুরের গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল চরমাইঝাড়িতে এমন একটি বাড়ি নির্মাণ করতে দেখা গেছে।

বাড়িটির নির্মাতা ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রায় এক বছর আগে চরমাইঝাড়ি গ্রামের শাহজাহান ঢালীর ছেলে ঈমান ঢালী সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ ইউটিউবে দেখতে পান পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে ঘর নির্মাণ করা যায়। যা দেখতে অত্যন্ত সুন্দর, টেকসই ও পরিবেশবান্ধব। পেশায় একজন মুদি দোকানদার হলেও ঈমান ঢালী পরিবেশ রক্ষায় বেশ সচেতন। ছোট থেকে তিনি জেনে-বুঝে কখনো পরিবেশের ক্ষতি করেননি। পরিবেশ ধ্বংসকারী প্লাস্টিকের বিকল্প ব্যবহার করতে ঈমান ঢালী সিদ্ধান্ত নেন পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করবেন। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী তিনি প্রায় এক বছর ধরে স্থানীয় ও আশপাশের বিভিন্ন বাজার থেকে প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ শুরু করেন।

বোতল সংগ্রহ করার পর প্রায় দুই মাস আগে ইব্রাহিম নামে স্থানীয় এক মিস্ত্রিকে নিয়ে বাড়ির নির্মাণ কাজ শুরু করেন ঈমান ঢালী। চার রুম বিশিষ্ট বাড়িটি নির্মাণ করতে প্রায় এক লাখ প্লাস্টিকের বোতল প্রয়োজন হবে। ইতোমধ্যে বাড়িটির প্রায় অর্ধেক কাজ সম্পন্ন করেছেন মিস্ত্রিরা।

পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের বোতলে বালু ভরে গাঁথুনি দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে বাড়ির দেয়াল। ইটের পরিবর্তে সারি সারি প্লাস্টিকের বোতল দিয়ে সিমেন্ট দ্বারা গাঁথুনি তৈরি করায় বাড়িটি হয়ে উঠছে দৃষ্টিনন্দন। বাড়িটি দেখতে প্রতিদিনই স্থানীয়রা দূর-দূরান্ত থেকে আসছে মানুষ। অনেকে মনে করছেন, বাড়িটি পরিবেশবান্ধব হবে। একটি বাড়ি নির্মাণে হাজার হাজার বোতল ব্যবহৃত হওয়ায় পরিবেশ রক্ষা পাবে প্লাস্টিকের ক্ষতি থেকে।

বাড়িটির নির্মাতা ঈমান ঢালী ঢাকা পোস্টকে বলেন, একদিন ইউটিউবে ভিডিও দেখতেছিলাম। হঠাৎ বোতল দিয়ে তৈরি দৃষ্টিনন্দন একটি বাড়ির ভিডিও আমার সামনে আসে। বাড়িটি দেখে আমারও ইচ্ছা হয় বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি করার। প্লাস্টিকের বোতল পরিবেশের ক্ষতি করে। এছাড়াও ইটের চেয়ে বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি করতে খরচ কম হওয়ায় আমি বোতলের বাড়ি করার সিদ্ধান্ত নিই। এরপর স্থানীয় বিভিন্ন বাজার থেকে প্রায় এক বছর ধরে পরিত্যক্ত বিভিন্ন প্লাস্টিকের বোতল সংগ্রহ করি। এরপর সিমেন্ট ও বালু এনে শুরু করি বাড়ির নির্মাণ কাজ। এখন পর্যন্ত বাড়ির অর্ধেক কাজ শেষ করতে পেরেছি। পুরো বাড়ির কাজ সম্পন্ন করতে আমার প্রায় এক লাখ বোতল লাগতে পারে। প্রতিদিনই বাড়িটি দেখার জন্য দূর-দূরান্ত থেকে অনেক লোক আসে। বিষয়টি আমারও ভালো লাগে।

বাড়িটির নির্মাণের মিস্ত্রি ইব্রাহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঈমান ঢালীর কথা অনুযায়ী ইউটিউবে ভিডিও দেখে বোতল দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করা শুরু করেছি প্রায়  দুই মাস আগে। এখন পর্যন্ত যতটুকু কাজ করেছি, মনে হচ্ছে ইটের চেয়ে শক্তিশালী হচ্ছে কাজ। প্রথম এমন অভিজ্ঞতা আমার। আশা করছি ভালো কিছু হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহীন মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, এমন বাড়ি আমি আগে কখনো দেখিনি। এই প্রথম দেখলাম। বাংলাদেশের কোথাও আছে কিনা জানি না। তবে দেখে অনেক ভালো লাগছে। প্লাস্টিকের বোতল এমনিতেও পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। সেই বোতল দিয়ে তিনি বাড়ি তৈরি করছেন, এটা পরিবেশের জন্য ভালো। আমাদের গ্রামে এমন বাড়ি দেখেও আমাদের ভালো লাগছে।

লোকমুখে শুনে গোসাইরহাট থেকে বোতলের বাড়িটি দেখতে এসেছেন সাগর সাহা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্লাস্টিকের পরিত্যক্ত বোতল দিয়ে বাড়ি তৈরি হচ্ছে এমন কথা লোকমুখে শুনে ইচ্ছা হয়েছিল বাড়িটি দেখার, তাই চলে আসলাম দেখতে। সত্যিই বাড়িটি অনেক সুন্দর। আর ইটের থেকে বোতলের বাড়ি তৈরি করতেও নাকি খরচ অনেক কম হয়। যদি ইটের থেকে বোতলের বাড়ি টেকসই হয় তাহলে আমিও বোতল দিয়ে বাড়ি করব।

পরিবেশ অধিদপ্তর শরীয়তপুরের সহকারী পরিচালক মো. রাসেল নোমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, গোসাইরহাট উপজেলার কুচাইপট্টি নামক স্থানে আমরা দেখেছি যে পরিত্যক্ত প্লাস্টিক দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করছে। এই উদ্যোগটিকে আমরা ভালোভাবে দেখছি। তবে এটি কতটুকু টেকসই হবে এ ব্যাপারে আমরা এখন কিছু বলতে পারছি না।

আরএআর