ঝালকাঠিতে এই প্রথমবারের মতো স্থায়ীভাবে অনলাইনে বিচারিক সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের জারি করা ‘প্র্যাকটিস নির্দেশনা’ অনুসরণ করে অডিও-ভিডিও বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে চিকিৎসক ও বিচারকদের সাক্ষ্যগ্রহণ হয়।

আইনজীবী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে এই সাক্ষ্যগ্রহণে ব্যবহার করা হচ্ছে ভিডিও কনফারেন্সিং প্রযুক্তি। এই উদ্যোগের ফলে একদিকে যেমন রাষ্ট্রীয় ব্যয় ও সময় সাশ্রয় হচ্ছে, অন্যদিকে চিকিৎসক ও বিচারকরা তাদের গুরুত্বপূর্ণ পেশাগত দায়িত্ব নির্বিঘ্নে পালনের সুযোগ পাচ্ছেন।

আদালত সূত্রে জানা যায়, তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার আইন, ২০২০ (২০২০ সালের ১১ নম্বর আইন) এর ৫ ধারার ক্ষমতা বলে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি ১৫/২০২৫নং বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নির্দেশনা জারি করেন, যেখানে বলা হয়, ডাক্তার এবং বিচারকদের সাক্ষ্য অডিও-ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে গ্রহণ করতে হবে। তবে মামলার প্রকৃতি অনুযায়ী বিচারক চাইলে সশরীরে সাক্ষ্য নেওয়ারও সুযোগ রয়েছে।

এই নির্দেশনার বাস্তব প্রয়োগে ঝালকাঠিতে প্রথমবারের মতো চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের দ্বিতীয় আদালতে ভার্চুয়ালি সাক্ষ্য প্রদান করেন যথাক্রমে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. শামসুল আরেফিন, লালমনিরহাটের ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট সদর হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. মো. আমিনুর রহমান এবং বিচারক আবুল কালাম আজাদ। সাক্ষ্যগ্রহণ কার্যক্রম পরিচালনা করেন ঝালকাঠি চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক তাসনিম জহরা ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের বিচারক আফরোজা বিনতে শহীদ।

অনলাইন সাক্ষ্যগ্রহণের এই পদ্ধতি শুধু সাক্ষ্যদাতাদের সময় বাঁচায়নি, সরকারের অর্থনৈতিক ব্যয়ও সাশ্রয় করেছে। আগে চিকিৎসকদের আদালতে হাজিরা দিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলা থেকে ঝালকাঠি আসতে হতো, যার ভ্রমণ ও থাকা-খাওয়ার খরচ সরকারকে বহন করতে হতো। এ ছাড়া, অনেক সময় গুরুত্বপূর্ণ সার্জারি বা জরুরি রোগীর চিকিৎসা ব্যাহত হতো। নতুন এ ব্যবস্থায় ডাক্তাররা নিজ কর্মস্থল থেকেই সাক্ষ্য দিতে পারছেন, ফলে একইসঙ্গে বিচার কাজ ও চিকিৎসা সেবা—দুটোই সচল রাখা সম্ভব হচ্ছে।

এ বিষয়ে চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টের প্রশাসনিক কর্মকর্তা নিত্যানন্দ ঘোষ বলেন, ঝালকাঠিতে এই প্রথম স্থায়ীভাবে ভার্চুয়াল মাধ্যমে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। এই পদ্ধতি বিচারিক প্রক্রিয়ায় নতুন দিগন্তের সূচনা করেছে। এতে আমরা আদালতের কার্যক্রমে আরও বেগবান করতে পারব। বিচারিক প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পাদন হবে। এতে সময়, নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা—সবকিছুই বজায় রাখা সম্ভব হবে। দূরবর্তী এলাকার সাক্ষীগণ, যাদের আদালতে উপস্থিত হওয়া কষ্টসাধ্য, তাদের জন্যও এই পদ্ধতি আশীর্বাদস্বরূপ।

এ উদ্যোগকে যুগোপযোগী ও রাষ্ট্রের সময়, সম্পদ রক্ষার একটি কার্যকর মডেল হিসেবে দেখছেন ঝালকাঠি জেলার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর (এডিশনাল পিপি) মো. আককাস সিকদার। তিনি বলেন, "কোভিড-১৯ করোনাকালীন সময়ে এই ব্যবস্থা অল্প সময়ের জন্য চালু ছিল। এখন এটিকে স্থায়ী ও বাধ্যতামূলকভাবে চালু করার আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এই উদ্যোগ শুধু আদালতের নয়, রাষ্ট্রেরও লাভজনক। চিকিৎসকদের যাতায়াত খরচ, সময় এবং নিরাপত্তা—সবই আগে আদালতের পক্ষ থেকে দেখভাল করতে হতো। এখন তারা নিজ নিজ কর্মস্থলে থেকেই সাক্ষ্য দিতে পারছেন। এটা প্রযুক্তিনির্ভর বিচার ব্যবস্থার একটি বড় অগ্রগতি।"

মো. শাহীন আলম/এএমকে