নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের দারুল ফালাহ বালিকা মাদ্রাসা থেকে চলতি বছর দাখিল পরীক্ষার চারজন ছাত্রী অংশ নিলেও কেউই উত্তীর্ণ হতে পারেনি। এমন ফলাফলের ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। কেউ একে 'দুঃখজনক' বলছেন, কেউ বলছেন 'লজ্জাজনক'।

এমন বিপর্যয়কর ফলাফলের পেছনে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক ও অ্যাকাডেমিক দুরবস্থাকে দায়ী করছেন স্থানীয় সচেতন মহল। অভিযোগ উঠেছে, দীর্ঘদিন ধরে মাদ্রাসার প্রধান মাওলানা ইমাম হোসাইনের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম ও শিক্ষাবান্ধব পরিবেশের অভাবে প্রতিষ্ঠানটি কার্যত অচল হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দারুল ফালাহ বালিকা মাদ্রাসায় বর্তমানে ১৫ জন শিক্ষক রয়েছেন, যার মধ্যে ১১ জন পুরুষ এবং ৪ জন নারী শিক্ষক। শিক্ষক সংখ্যা তুলনামূলক বেশি হলেও শিক্ষার্থীর সংখ্যা ধারাবাহিকভাবে কমে এসেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মিজানুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাদ্রাসায় শিক্ষক আছেন, কিন্তু শিক্ষা নেই। এমন মাদ্রাসার কী প্রয়োজন? এটা আমাদের এলাকার জন্য লজ্জার ব্যাপার। মাদ্রাসার এমন খারাপ ফলাফলের জন্য দায়ী প্রধান মাওলানা ইমাম হোসাইন। তিনি দুর্নীতির রাজা। তার মধ্যে শুধুই অনিয়ম। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিও জানান তিনি।

এ বিষয়ে জানতে একাধিকবার ফোন দিয়েও মাদ্রাসার প্রধান মাওলানা ইমাম হোসাইনের কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাদ্রাসার জমিদাতা ও সাবেক শিক্ষকদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বিরোধ রয়েছে প্রধান মাওলানা ইমাম হোসাইনের। যার কারণে তাদের নতুন জমিতে মাদ্রাসা স্থানান্তর করতে হয়েছে।

মোতালেব নামের আরেক স্থানীয় বাসিন্দা ঢাকা পোস্টকে বলেন, মাদ্রাসার প্রধানের একক কর্তৃত্ব, নিয়োগ ও অর্থ ব্যবস্থাপনায় স্বেচ্ছাচারিতার কারণে মাদ্রাসার পরিবেশ দিন দিন খারাপ হচ্ছে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে প্রধানের দ্বন্দ্ব এবং অভিভাবকদের অনীহার কারণে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে। তার বিরুদ্ধে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা তদন্ত করছেন।

এ বিষয়ে বেগমগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা বিষয়টি সম্পর্কে অবগত। তবে দারুল ফালাহ বালিকা মাদ্রাসার এ বছরের ফলাফলে আমরা হতাশ হয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এমন ফলাফল কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়।

বেগমগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা নাছরুল্লাহ আল মাহমুদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমরা মাদ্রাসাটির নানা অনিয়মের বিষয়ে জেনেছি। সেটির তদন্ত চলমান রয়েছে। শাস্তি হিসেবে মাদ্রাসার প্রধানের বেতন বন্ধ রাখা হয়েছে।

হাসিব আল আমিন/এএমকে