নোয়াখালীতে এখনো পানিবন্দি ১৭ হাজার পরিবার, বন্যায় ক্ষতি ২৪০ কোটি টাকা
নোয়াখালীতে টানা অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলের কারণে সৃষ্ট বন্যায় জেলার ছয় উপজেলার হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এখনও ১৬ হাজার ৯৩০ পরিবার পানিবন্দি রয়েছেন। বিভিন্ন খাতে সব মিলিয়ে বন্যা ও জলাবদ্ধতায় নোয়াখালীতে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪০ কোটি ১২ লাখ টাকা।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ৮ জুলাই থেকে শুরু হওয়া অতিবৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে জেলার ৬টি উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়ন বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে ২ লাখ ৩ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়। এছাড়া সেনবাগ, কবিরহাট ও সুবর্ণচর উপজেলায় আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৫৭টি বসতঘর এবং সুবর্ণচরে একটি ঘর সম্পূর্ণভাবে ধসে পড়েছে। শুক্রবার (১৮ জুলাই) বিকেল পর্যন্ত ৪১ হাজার ৯৫৩ জন মানুষ পানিবন্দি থাকার তথ্য দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কার্যালয়।
বিজ্ঞাপন
জানা গেছে, বন্যায় সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে মৎস্যখাতে। পুকুর-খামার ভেসে যাওয়ায় বড় মাছের ক্ষতি হয়েছে ১১২ কোটি ৪৬ লাখ টাকা। পোনা মাছের ক্ষতি হয়েছে ২২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। কৃষি খাতেও লেগেছে বড় ধাক্কা। ৫ হাজার ৫০৭ হেক্টর জমির ফসল সম্পূর্ণ এবং ২ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমির ফসল আংশিকভাবে নষ্ট হয়েছে। আমন ধানের বীজতলার ক্ষতি হয়েছে ৮৯১ হেক্টর জমিতে। সব মিলিয়ে কৃষিতে ক্ষতির পরিমাণ ৫১ কোটি ১৮ লাখ টাকা।
আরও জানা গেছে, কবিরহাট, সেনবাগ ও সুবর্ণচরে ৫৮টি বসতঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ক্ষতির পরিমাণ ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। হাঁস-মুরগি মারা গিয়ে প্রাণিসম্পদ খাতে ক্ষতি হয়েছে ৫৬ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। ৬০০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। বাঁধ ও নদীতীর রক্ষা ব্যবস্থায় ক্ষতি হয়েছে ২৩ কোটি টাকা।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, কোম্পানীগঞ্জ, কবিরহাট, সদর, সেনবাগ, সুবর্ণচর ও হাতিয়া উপজেলার নিম্নাঞ্চল এখনো পানির নিচে। সবচেয়ে বেশি জলাবদ্ধতা রয়েছে কবিরহাট, সদর, কোম্পানীগঞ্জ ও সেনবাগে
সুবর্ণচর উপজেলার কৃষক আনোয়ার মিয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, চারপাশ পানিতে তলিয়ে থাকায় বীজতলা তৈরির জায়গা পাচ্ছেন না। কেউ কেউ উঁচু জায়গা ভাড়া নিয়ে বীজতলা করছেন, কিন্তু পুঁজি সংকটে তিনি তা পারছেন না। পানিতে সবজি ক্ষেতও নষ্ট হয়েছে। ধার-দেনা পরিশোধ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তিনি। সরকারের সহায়তা ছাড়া ঘুরে দাঁড়ানো সম্ভব নয় বলে জানান তিনি।
কাদিরহানিফ ইউনিয়নের ইউপি সদস্য মো. আবদুল্লাহ বলেন, আমার ওয়ার্ডের ৫৫ শতাংশ বাড়িতে এখনো পানি। নোয়াখালী খালের পানি নামার গতি ধীর হওয়ায় দুর্ভোগ লম্বা হতে পারে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান ঢাকা পোস্টকে বলেন, অতিবৃষ্টিতে জেলার ৯ উপজেলাতেই খেতের ফসল, আমন বীজতলা, পুকুর ও খামারের মাছ, পোলট্রি খামার, হাঁস-মুরগি, রাস্তা ও বেড়িবাঁধের ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন খাতে সব মিলিয়ে বন্যা ও জলাবদ্ধতায় নোয়াখালীতে মোট ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৪০ কোটি ১২ লাখ টাকা। সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করে ক্ষয়ক্ষতির এই তথ্য নেওয়া হয়েছে।
জেলা আবহাওয়া কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, নোয়াখালীতে জুলাই মাসে গড় বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ৬৯০ মিলিমিটার। অথচ মাসের প্রথম ১০ দিনেই ৬২৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক বেশি। এ ধরনের অতিবৃষ্টির ফলে জেলার বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। পানি নিষ্কাশনের পথ না থাকায় পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে পড়েছে।
হাসিব আল আমিন/আরকে