জুলাই গণঅভ্যুন্থান স্মরণে অংশগ্রহণমূলক আইডিয়া প্রতিযোগিতায় চুয়াডাঙ্গার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম এবং জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ.এম. সালাউদ্দীন মনজুর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তুলে সংবাদ সম্মেলন করেছে অংশগ্রহণকারী ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। 

রোববার (২০ জুলাই) রাত ৮টায় চুয়াডাঙ্গা শহরের একটি রেস্টুরেন্টে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থী সাইফুল্লাহ আল সাদিক, সুমন সর্দার, মুশফিকুর রহমান, মাহাবুব ইসলাম আকাশ ও ফাহিম উদ্দীন মভিন প্রমুখ। 

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে অংশগ্রহণকারীরা বলেন, জেলা পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত অংশগ্রহণমূলক আইডিয়া প্রতিযোগিতা গণঅভ্যুত্থান স্মরণে মোট ১১টি আইডিয়া জমা পড়ে। চুয়াডাঙ্গা জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মনজু ১৩ জুলাই বা ১৪ জুলাই প্রেজেন্টেশন নেওয়া হবে বলে জানান। কিন্তু ১৪ জুলাই পর্যন্ত কোনো সময়, তারিখ বা নির্দেশনা আমাদেরকে দেওয়া হয়নি। সরাসরি যোগাযোগ করলে জানানো হয় প্রেজেন্টেশন ছাড়াই বিজয়ী নির্ধারণ করা হয়েছে। এ বিষয়ে যুক্তিসংগত প্রশ্ন করলে এ সময় আমাদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা হয় এবং জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলামের নিকট যেতে বলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সালাউদ্দিন মনজু। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করার পর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে আলোচনার আয়োজন হয়। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, পুনরায় সকল দলের প্রেজেন্টেশন নেওয়া হবে। পাঁচ দিনের প্রস্তুতির সুযোগ দিয়ে রোববার ২০ জুলাই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মিনি কনফারেন্স রুমে (২য় তলা) প্রেজেন্টেশন অনুষ্ঠিত হয়।

শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, একই দলকে পুনরায় প্রথম ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ওই দলটি মূল মানদণ্ডই পূরণ করেনি। প্রজ্ঞাপনে বলা ছিল দলের সদস্যদের ভূমিকা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে। গণঅভ্যুত্থানের সাথে সামঞ্জস্য থাকতে হবে। এই দুটি নির্ধারিত মানণ্ডে ১০ করে মোট ২০ নম্বরও ছিল। অথচ, বিজয়ী দলের আইডিয়ায় এই শর্তদুটিই অনুপস্থিত। যে দল ২০ মার্কের উত্তরই করেনি, সেই দল ১০০ নম্বরের মধ্যে কীভাবে ৮৫ নম্বর পাই? প্রশ্ন রাখেন অভিযোগকারী শিক্ষার্থীরা।

তারা আরও বলেন, নির্দেশনা মোতাবেক প্রজেক্ট জমা দেওয়ার সর্বোচ্চ সীমা ছিল ২ পৃষ্ঠা। যে দলকে বিজয়ী করা হয়েছে তারা জমা দেয় ৪ পৃষ্ঠা। যা স্পষ্টই নীতিমালার লঙ্ঘন এবং প্রথমেই বাতিল যোগ্য। কিন্তু সেটিকেই প্রথম ঘোষণা করা হয়েছে। আমাদের জানানো হয় আমরা পেয়েছি ৮৩ নম্বর এবং বিজয়ী দল পেয়েছে ৮৫ নম্বর। আমাদের স্পষ্ট প্রশ্ন, যিনি নির্ধারিত এতোগুলো শর্ত লঙ্ঘন করে কেউ আইডিয়া জমা দেয়, তাহলে কীভাবে সেই আইডিয়াটি সর্বোচ্চ নম্বর পায়? তাছাড়া যা প্রাথমিক যাচাই-বাচাই এর সময়ই বাতিল হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা প্রতিযোগিতার মধ্যে গণ্য করা কেন হলো?’

নানা ভুল তথ্য দিয়ে প্রথম হওয়া আইডিয়াটি তৈরি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, প্রথম হওয়া আইডিয়াটিতে চুয়াডাঙ্গা জেলার ২০২১ সালের ছয় মাসের আত্মহত্যার একটি তথ্যের কথা বলা হয়েছে। যা, অনেক পুরোনো তথ্য এবং অনির্ভরযোগ্য। 

এছাড়াও, কিশোর-কিশোরীদের অংশগ্রহণের হার হিসেবে ৪৫ শতাংশ দেখানো হয়েছে। যে তথ্যটিরও কোনো নির্ভরযোগ্যতা নেই। একটি ধারণা মাত্র আইডিয়া, যা জুলাই অভ্যুত্থানের সাথে সম্পৃক্ত নয়। আইডিয়াটি ভালোভাবে লক্ষ করলে দেখা যায়, কমপক্ষে ৫টি স্কুল-কলেজ আইডিয়ার নাম সংশ্লিষ্ট্য প্রধান কাজ তথা ‘মেন্টাল হেলথ ক্লাব’ গঠনের কথা বলা আছে। এখন একটি প্রশ্ন থেকেই যায়, একটি অস্পষ্ট আইডিয়া, যা বৃহত্তরভাবে বা এই উপযোগীর সঠিক বাস্তবায়ন করতে পারবে না, সেই আইডিয়াটিকে কিভাবে প্রথম হিসেবে গ্রহণ করা হয়? এখানে জেলা প্রশাসক ও জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা পক্ষপাতিত্ব করেছেন বলে সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীরা। 

সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম এবং জেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এইচ.এম. সালাউদ্দীন মনজুর নম্বরে কল করা হলে রিসিভ করেননি।

আফজালুল হক/এমএএস