আজও বাবাকে খোঁজে শহীদ শাহজাহানের ৭ মাসের শিশুপুত্র
৭ মাস বয়সী শিশু ওমর ফারুক। সবেমাত্র বসতে শিখেছে। জন্মের আগেই জুলাই গণঅভ্যুত্থানে তার বাবা শহীদ হয়েছেন। শিশুটি জানেই না একটি বুলেট তাকে সারাজীবনের জন্য বঞ্চিত করেছে বাবার আদর থেকে। বাবার ছবি দেখলেই যেন বাবার কোলে যাওয়ার জন্য ছটফট করে অবুঝ ওমর।
২০২৪ সালের ১৬ জুলাই বিকেলে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে ঢাকার নিউমার্কেটে গুলিতে নিহত শাহজাহানের একমাত্র পুত্র সন্তান ওমর ফারুক। সন্তান পৃথিবীর আলো দেখার ৪ মাস আগেই পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন শাহজাহান। এখন শিশুটির ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী ফাতেহা।
বিজ্ঞাপন
সরেজমিনে জানা গেছে, ২০২৩ সালের মার্চে পারিবারিকভাবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন ভোলার দৌলতখান উপজেলার সৈয়দপুর ইউনিয়নের ফাতেহা ও শাহজাহান। এরপর দারিদ্র্যতার কারণে তারা পাড়ি জমান স্বপ্নের শহর ঢাকায়।
বিয়ের পর শাহজাহান স্ত্রীকে নিয়ে থাকতেন ঢাকা কামরাঙ্গীচরের চান মসজিদ এলাকায়। নিউমার্কেটে ফুটপাতে পাপড় বিক্রি করে সংসার চালাতেন তিনি। কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরু হলে ৪ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর বাঁধা উপেক্ষা করে ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে গিয়ে ১৬ জুলাই বিকেলে নিউমার্কেট এলাকায় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে শহীদ হন শাহজাহান। স্বামীর মৃত্যুর পর সন্তানকে নিয়ে তার স্ত্রী ফাতেহা ভোলার দৌলতখানে গ্রামের বাড়িতে চলে আসেন। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশন থেকে পাওয়া সাড়ে ৩ লাখ টাকা খরচ হয়ে যাওয়ায় এখন কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
বিজ্ঞাপন
ফাতেহা বলেন, শাহজাহান আমাকে না জানিয়ে আন্দোলনে যেত। খবরে দেখতেছিলাম পাখির মতো মানুষগুলোকে মারতেছে। ১৬ জুলাই দুপুরে সে আন্দোলনে যাওয়ার পর আমি তাকে ফোন দিয়ে বলি তুমি চলে আসো। চার মাসের গর্ভবতী আমি, তোমার কিছু হলে আমাদের কি হবে? সে বলে, বাংলাদেশ স্বাধীন করেই আমি আসব। ওই দিন বিকেল শাহজাহান গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়। পরে তার ফোন থেকে এক ব্যক্তি আমার ভাইয়ের মোবাইলে কল দিয়ে বলে শাহজাহান হাসপাতালে ভর্তি। পরে ঢাকা মেডিকেলে গিয়ে দেখি তার মরদেহ মর্গে পুলিশ পাহারায় রয়েছে। পুলিশ তার মরদেহ আমাদের দেখতেও দেয়নি। এর দুই দিন পর পুলিশ আজিমপুরে শাজাহানকে দাফন করে। আমাদের নিজের হাতে মাটিও দিতে দেয়নি।
বর্তমানে ছেলেকে নিয়ে অর্থের অভাবে রয়েছেন জানিয়ে ফাতেহা বলেন, শাহজাহানের মৃত্যুর ৫ মাস পর আমাদের ছেলে সন্তানের জন্ম হয়। আমার বড় ভাই মাকে মাসে যে টাকা খরচের জন্য দেয় তা দিয়েই আমাদের চলতে হয়।
শহীদ শাহজাহানের শাশুড়ি নবিসা বলেন, আমি মারা গেলে মেয়ে ও নাতির পাশে দাঁড়ানোর কোনো লোক নেই। ছেলে মাসে ৫০০-১০০০ হাজার টাকা দেয়। তা দিয়েই মেয়েকে নিয়ে চলি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ভোলার জেলা প্রশাসক মো.আজাদ বলেন, শহীদ শাহজাহানের ওয়ারিশ নির্ধারণে সমস্যা ছিল। সে সমস্যা কাটিয়ে আমরা সম্প্রতি কাগজপত্র ঢাকায় পাঠিয়েছি। তার স্ত্রী অচিরেই সরকারি সহযোগিতা পাবেন।
এদিকে সন্তানের দায়িত্ব অন্তবর্তী সরকারকে নেওয়ার পাশাপাশি স্বামী হত্যার বিচারের দাবি জানিয়েছেন শহীদ শাহজাহানের স্ত্রী।
খাইরুল ইসলাম/আরকে