মায়ের পরকীয়া জেনে যাওয়ায় মেয়েকে হত্যা, আড়াই বছর পর মামলা
মায়ের পরকীয়া দেখে ফেলায় মেয়ে কেয়াকে হত্যার পর গলায় ওড়না পেচিয়ে আত্মহত্যা বলে প্রচার চালানোর আড়াই বছর পর এ ঘটনায় যশোর আদালতে হত্যা মামলা হয়েছে। ২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি উপশহর এলাকায় এ ঘটনায় নিহতের বাবা সদর উপজেলার বিজয়নগর গ্রামের কামাল হোসেন বাদী হয়ে খোরশেদ আলম নামে একজনের বিরুদ্ধে গত ৩ আগস্ট মামলাটি করেছেন।
বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রহমত আলী এই ঘটনায় থানা পুলিশ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে কিনা সে সম্পর্কে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য কোতোয়ালি থানার ওসিকে নির্দেশ দিয়েছেন। আসামি খোরশেদ আলম মাগুরার শালিখা উপজেলার সীমাখালী গ্রামের সোলায়মান বিশ্বাসের ছেলে।
বাদী মামলায় বলেছেন, তিনি ঢাকাতে কাভার্ডভ্যানের মিস্ত্রি হিসেবে কাজ করেন। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে ঢাকাতেই বসবাস করতেন। করোনাকালীন কাজে মন্দা ভাব দেখা দেওয়ায় স্ত্রী-সন্তানদের উপশহর এলাকার একটি বাসা ভাড়া করে রেখে যান। পরে তিনি ঢাকাতেই চলে যান। আসামি খোরশেদ আলী বাদীর স্ত্রীর দূর সম্পর্কের ভাই হয়। খোরশেদ আলম তাদের বাসায় যাতায়াত করতো। এমন কি মাঝেমধ্যে রাতযাপনও করতো। এরই মধ্যে আসামি খোরশেদ আলম বাদীর স্ত্রীর প্রতি কুদৃষ্টি দেয়। বিষয়টি জানতে পেরে মেয়ে কেয়া খাতুন আসামিকে নিষেধ করে।
বিজ্ঞাপন
কেয়া আসামিকে আরও বলেছিল, মামা আপনি যদি বিরত না হন তাহলে বিষয়টি আমার বাবাকে বলে দেব।
২০২৩ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে খোরশেদ আলম ওই নারীর ভাড়া বাসায় অবস্থান করছিল। রাত ২টার দিকে বাদীর স্ত্রী টয়লেটে যাওয়ার সময় মেয়ের ঘরে দেখতে পান ফ্যানের সঙ্গে গলায় ওড়না পেচিয়ে ঝুলে আছে। এ সময় চিৎকার দিয়ে আশপাশের লোকজন এসে মেয়েটিকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। এরপরে খবর পেয়ে মেয়ের বাবা ঢাকা থেকে এসে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়েন। ফলে ওই সময় মেয়ে কষ্ট পাবে মনে করে ময়নাতদন্ত না করেই লাশের দাফন সম্পন্ন করে।
বিজ্ঞাপন
মামলার বাদী কামাল হোসেন জানিয়েছেন, কিছুদিন যেতে না যেতেই পরিবার ও আশপাশের লোকজনদের মাধ্যমে জানতে পারেন স্ত্রীর সঙ্গে আসামি খোরশেদ আলমের পরকীয়া সম্পর্ক ছিল। সে কারণে খোরশেদ আলম মাঝেমধ্যে তাদের বাসায় এসে রাতযাপন করতো। রাত যাপনকালে খোরশেদ আলমের সাথে তার স্ত্রীর অনৈতিক সম্পর্ক দেখে ফেলে। আর ওই অনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তাকে জানিয়ে দিবে ভেবে মেয়েটিকে তার মায়ের সহযোগিতায় খোরশেদ আলম খুন করে ফ্যানের সাথে গলায় ওড়না পেচিয়ে ঝুলিয়ে রাখে। বিষয়টি ওই সময় মেয়ের মা নিজেই আড়াল করার চেষ্টা করেছিলো।
এরপর থেকে বিভিন্ন সময়ে মেয়ের মায়ের ৫/৬ ভরি স্বর্ণাংলকার নিয়ে গিয়েছে খোরশেদ আলম। এই নিয়ে খোরশেদের সঙ্গে মেয়ের মায়ের বিরোধ চরমে উঠে গেছে। ফলে সম্প্রতি কিছু কিছু কথা জানতে পারায় বাদী বুঝতে পেরে থানা পুলিশের দ্বারস্থ হন। কিন্তু কোতোয়ালি থানা পুলিশ এই ব্যাপারে মামলা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে বাধ্য হয়ে কামাল হোসেন মেয়ের হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা করেছেন।
রেজওয়ান বাপ্পী/আরকে