মাটির গন্ধে গড়া গ্রামের মাঠে বেড়ে ওঠা। সেই মাঠেই ছুটে চলা আর স্বপ্ন বোনা। আর তাদের সেই স্বপ্ন এবার যেন আকাশ ছুঁয়েছে। সাতক্ষীরার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ১০ ক্ষুদে ফুটবলার ব্যাংককের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে। আর প্রথম অংশগ্রহণেই চ্যাম্পিয়নের মুকুট ছিনিয়ে এনেছে তারা।
 
রোববার (১০ আগস্ট) ব্যাংককের এক্কামাই ইন্টারন্যাশনাল স্কুল মাঠে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৪ আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে অপরাজিত থেকে শিরোপা জয় করে সাবিনা খাতুনের ওয়ারিয়র স্পোর্টস একাডেমি।
 
প্রথম ম্যাচে স্বাগতিক ব্যাংকক সকার একাডেমিকে ৩-০ গোলে হারায় ওয়ারিয়ররা। গোল করেন সিয়াম ইসলাম (২) ও সালাহউদ্দিন রনি (১)। দ্বিতীয় ম্যাচে ফিলিপাইন ফুটবল একাডেমিকে ২-১ গোলে হারায় তারা। নুর হোসেন ও সিয়াম ইসলাম একটি করে গোল করেন।
 
ফাইনালে আবারও মুখোমুখি হয় ব্যাংকক সকার একাডেমির সঙ্গে। সিয়াম ইসলাম, নুর হোসেন ও মুকিদুরজ্জামানের এক এক গোলের সৌজন্যে ৩-০ ব্যবধানে জয় পেয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় ওয়ারিয়ররা। শিরোপা জয়ের পর চ্যাম্পিয়নদের হাতে তুলে দেওয়া হয় মেডেল, সার্টিফিকেট ও ট্রফি।
 
ভুটানের নারী ফুটবল লিগে পারো এফসির হয়ে খেলতে থাকা জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা সাবিনা খাতুন বলেন,“আমার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল আমাদের গ্রামের ছেলেমেয়েরা যেন বিদেশের মাঠে দাঁড়িয়ে লাল-সবুজের পতাকা উড়াতে পারে। আজ ওয়ারিয়রদের হাতে ট্রফি দেখে মনে হচ্ছে, সেই স্বপ্ন সত্যি হয়েছে। এই জয় শুধু গোলের হিসেবে নয়, এটি তাদের সাহস, ঘাম আর বিশ্বাসের জয়। আমি কৃতজ্ঞ বাংলা ট্র্যাক সল্যুশন, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও রয়্যাল ওরাঞ্জের প্রতি—তারা শুধু অর্থায়ন করেনি, আমাদের স্বপ্নে হাত ধরেছে। আমরা প্রমাণ করেছি, সুযোগ পেলে বাংলাদেশের শিশুরা বিশ্ব মঞ্চেও আলো ছড়াতে পারে।”
 
২০২১ সালের ডিসেম্বরে যাত্রা শুরু করা ওয়ারিয়র স্পোর্টস একাডেমি বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ওয়ান স্টার মর্যাদা পেয়েছে। বয়সভিত্তিক প্রশিক্ষণ, স্থানীয় প্রতিযোগিতা ও প্রতিভা বাছাইয়ের মাধ্যমে গড়ে ওঠা এই দলের কোচ পিন্টু কুমার মিত্র, সহকারী কোচ সিরাজ উদ্দিন, ট্রেইনার ফেরদৌস খোকন, ম্যানেজার মেহেদী হাসান ও টিম লিডার তৌসিফ ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে প্রস্তুতিতে কাজ করেছেন।
 
দলে ছিলেন—আলিফ জামান, সোহাগ হোসেন, সিয়াম ইসলাম, মারুফ বিল্লাহ, আজিজুর রহমান ভূঁইয়া, মুকিদুরজ্জামান, প্রিয়ম বিশ্বাস, রিফাত পারভেজ, নুর হোসেন ও সালাহউদ্দিন রনি।

ইব্রাহিম খলিল/আরকে