নানা অনিয়মের অভিযোগে তৃতীয়বারের মতো রাজবাড়ীর ১০০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। বুধবার (২০ আগস্ট) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ছয় ঘণ্টা ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের একটি এনফোর্সমেন্ট টিম এ অভিযান পরিচালনা করে।

অভিযানে নেতৃত্ব দেন দুদক ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজ।

অভিযানের সময় হাসপাতালে রোগীদের জন্য বরাদ্দকৃত খাবারে অনিয়ম, প্রতিদিনের ডায়েট চার্ট অনুযায়ী খাবার না দেওয়া, নিম্নমানের খাবার সরবরাহ, চিকিৎসকদের অনুপস্থিতি, হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, চিকিৎসা সেবায় হয়রানি, সরকারি ওষুধে অনিয়ম এবং স্টকে ঘাটতিসহ একাধিক অনিয়মের প্রমাণ পায় দুদক।

দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোস্তাফিজ বলেন, দুদকের প্রধান কার্যালয়ের নির্দেশে রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় হয়রানিসহ নানা অভিযোগের প্রেক্ষিতে এই এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করি। আমরা ছদ্মবেশে সেবার মান পর্যবেক্ষণ করি। দেখা যায়, রোগীদের খাবারের তালিকা অনুসারে খাবার দেওয়া হয় না। সপ্তাহে সাত দিনই দেওয়া হয় পাঙাশ মাছ ও ব্রয়লার মুরগি, অথচ তালিকা অনুযায়ী সপ্তাহে এক দিন খাসির মাংস, রুই বা কাতল মাছ দেওয়ার কথা। এ ছাড়া, চিকিৎসা সেবায় হয়রানির অভিযোগও সত্য প্রমাণিত হয়েছে। একইসঙ্গে হাসপাতালের পরিবেশ ছিল অপরিষ্কার।

তিনি আরও বলেন, হাসপাতালের মেডিসিন স্টোরে অভিযান চালিয়ে সিপ্রোক্স নামের ওষুধে ৫০০ পিস ঘাটতি পাওয়া যায়। এ ছাড়া গাইনি ওয়ার্ডে ২৬৬ পিস মন্টিলুকাস ওষুধের ঘাটতি ধরা পড়ে। তবে অন্যান্য ওষুধ মজুদে সঠিক পাওয়া গেছে। হাসপাতালের এমএসআর ক্রয়-সংক্রান্ত কাগজপত্রও সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো পর্যালোচনা করে কমিশনের কাছে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন পাঠানো হবে এবং পরবর্তীতে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অভিযান চলাকালে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. শেখ মো. আব্দুল হান্নান কিছু সময় সহযোগিতা করলেও দুপুর আড়াইটার দিকে হাসপাতাল ত্যাগ করেন। ফলে অভিযান শেষে তার আনুষ্ঠানিক বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তার ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে ফোন দিলে অপর এক ব্যক্তি জানান, তিনি ওই সময় মেডিকেল সেন্টার নামে একটি ক্লিনিকে অপারেশন করছিলেন।

অভিযানে দুদকের ফরিদপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মো. কামরুল হাসান, সহকারী পরিদর্শক মো. শামীমসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, এর আগে ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর ও চলতি বছরের ১৫ মে দুদক রাজবাড়ী সদর হাসপাতালে এনফোর্সমেন্ট অভিযান পরিচালনা করে এবং সে সময়ও নানা অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গিয়েছিল।

মীর সামসুজ্জামান সৌরভ/এএমকে