ফ্রিজের কম্প্রেসার ‘অক্ষত’, স্থানীয়দের দাবি আগুন গ্যাস থেকেই
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের সিআইখোলা এলাকায় একটি টিনশেড বাড়িতে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত এক শিশু ও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। দগ্ধ অবস্থায় চিকিৎসাধীন আরও সাতজনের অবস্থাও আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ঘটনাটি ঘটে গত শনিবার (২৩ আগস্ট) ভোররাত সাড়ে ৩টার দিকে। হঠাৎ বিস্ফোরণ ও অগ্নিকাণ্ডে দুটি কক্ষের অন্তত নয়জন গুরুতর দগ্ধ হন। তবে আগুন লাগার সঠিক কারণ নিয়ে দেখা দিয়েছে মতবিরোধ।
বিজ্ঞাপন
ঘটনার পরপরই ঘটনাস্থলে গিয়ে কাজ শুরু করে কাঁচপুর ও আদমজী ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের দুটি ইউনিট। আদমজী স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন কর্মকর্তা মিরন মিয়া জানান, প্রাথমিক তদন্তে তারা দেখতে পেয়েছেন- বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে রেফ্রিজারেটরের কম্প্রেসার বিস্ফোরিত হয়ে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তিনি বলেন, ঘরের ফ্রিজটির পেছনের অংশ সম্পূর্ণরূপে পুড়ে গিয়েছিল। সুইচবোর্ডের অংশও গলে গিয়েছিল। আবার টিনশেড ঘরে খোলা জায়গা থাকায় গ্যাস জমে থাকার সম্ভাবনাও তুলনামূলক কম।
তবে স্থানীয়দের দাবি ভিন্ন। তাদের অভিযোগ, তিতাস গ্যাসের লাইন থেকে দীর্ঘদিন ধরেই লিকেজ হচ্ছিল। ওই বাড়িতে প্রায়ই গ্যাসের তীব্র গন্ধ পাওয়া যেত। এমনকি প্রায় দেড় বছর আগে একই বাড়িতে গ্যাস লিকেজের কারণে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছিল, যদিও তখন বড় কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি।
নিহত তাহেরার নাতনির স্বামী ইব্রাহীম বলেন, এই বাড়িতে শুরু থেকেই গ্যাস লিকেজের সমস্যা ছিল। এখনো ভেতরে গেলে গন্ধে থাকা যায় না।
বাড়িটির আরেক ভাড়াটিয়া শাহিদা আক্তার জানান, ২০১৭ সাল থেকে তারা সেখানে বসবাস করছেন। বহুবার বাড়ির সামনের ফাটা জায়গায় পানি জমলে গ্যাসের বুদবুদ উঠতে দেখা গেছে। পরে ওই জায়গায় সিমেন্ট দিয়ে প্রলেপ দেওয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন
বাড়ির সামনের ওষুধের দোকানদার নূর হোসেনও একই অভিযোগ করেন। তার ভাষায়, রাস্তার নিচ থেকে শুরু করে বাড়ির নিচ দিয়ে গ্যাসের লাইন গেছে। লিকেজ অনেক আগে থেকেই ছিল, কিন্তু সঠিকভাবে মেরামত করা হয়নি।
দগ্ধ সালমার মামা মিজানুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ফায়ার সার্ভিসের লোকজন কীভাবে বলল যে ফ্রিজের কম্প্রেসার বিস্ফোরণে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে, তা আমার বোধগম্য নয়। আমরা নিজেরাই ঘরে থাকা ফ্রিজটি ভালো করে দেখেছি। ফ্রিজের কম্প্রেসার এখনো অক্ষত অবস্থায় আছে। যদি সত্যিই ফ্রিজ বিস্ফোরণ হতো, তাহলে ফ্রিজটি কি অক্ষত থাকত? আর ঘটনাটি তো কোনো ছোটখাটো বিস্ফোরণ নয়, এটি ছিল ভয়াবহ।
অন্যদিকে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক বিপণন বিভাগের উপমহাব্যবস্থাপক দাবি করেছেন, তাদের দুই দিনের পর্যবেক্ষণে গ্যাস লিকেজের কোনো প্রমাণ মেলেনি।
তিনি বলেন, আমরা রাইজার বা লাইনের কোথাও লিকেজ পাইনি। ডিটেক্টর দিয়েও পরীক্ষা করা হয়েছে ন্যূনতম কোনো গ্যাস পাওয়া যায়নি। পানি জমা জায়গায় স্বাভাবিকভাবেই কিছু গন্ধ থাকতে পারে।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকেও জানানো হয়েছে, এখন পর্যন্ত গ্যাস বিস্ফোরণের কোনো দৃশ্যমান আলামত পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি বিবেচনা করা হচ্ছে।
এদিকে ঘটনার পর স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা মানববন্ধনের প্রস্তুতি নিলেও নতুন করে একজনের মৃত্যুর খবরে কর্মসূচি আপাতত স্থগিত রাখা হয়েছে।
ঘটনার পর নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল বিভাগও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মোহাম্মদ ইসমাইল চৌধুরী জানান, তারা জায়গাটি বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে পর্যালোচনা করবেন। তিনি ঘটনাস্থলে এক ধরনের কটু গন্ধ পেয়েছেন, তবে সেটি গ্যাস কিনা তা নিশ্চিত নন।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর আলম জানান, হতাহতদের পরিবার চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত থাকায় এখনো থানায় কেউ মামলা করতে আসেননি। তবে বিষয়টি আমরা পর্যবেক্ষণে রেখেছি।
মেহেদী হাসান সৈকত/আরএআর