মুন্সীগঞ্জে নৌ ডাকাতদের ধরতে অভিযান, ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা
মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুর এলাকায় পুলিশের ওপর নৌ ডাকাতদের গুলি ও ককটেল হামলার ঘটনায় ডাকাতদের ধরতে অভিযান চালিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অভিযানে পুলিশ, র্যাব, নৌ পুলিশ, কোস্টগার্ডসহ দুই শতাধিক সদস্য অংশ নেন। তবে এই অভিযানে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি এবং নদীতেও কাউকে খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে গজারিয়া থানা পুলিশ নিশ্চিত করেছে।
বুধবার (২৬ আগস্ট) বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা পর্যন্ত এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল এইচ. এম. সাজ্জাদ হোসেন। গুয়াগাছিয়া, জামালপুর ও আশপাশের নদী এলাকায় এ অভিযান চালানো হয়।
বিজ্ঞাপন
এর আগে সোমবার (২৫ আগস্ট) রাত থেকে মতলব উত্তরের বেলতলী লঞ্চঘাট, বেদেপল্লী, আশ্রয়ণ প্রকল্প, সওদাগর বাড়ি এবং চিতাখোলা এলাকায় প্রতিটি বসতবাড়ি ও ঝোঁপঝাড়ে তল্লাশি চালানো হয়। তবে কোথাও গুলি চালিয়ে পালিয়ে যাওয়া নৌ ডাকাতদের খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এ ঘটনায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করে ও ২৫-৩০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে গজারিয়া থানায় মামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
বিজ্ঞাপন
এদিকে হামলার ঘটনার পর থেকে জামালপুর ও শিমুলিয়া এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ এবং রাস্তাঘাট ফাঁকা হয়ে আছে। স্থানীয়রা আতঙ্কে বাড়ির বাইরে যাচ্ছেন না।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের মেঘনা ও শাখা নদীতে অবৈধ বালু মহাল পরিচালনা ও নৌযানে চাঁদাবাজি করে আসছে নয়ন, পিয়াস, রিপন ও লালু বাহিনীর সদস্যরা। গত এক বছরে নদীতে কয়েক দফা গোলাগুলিতে প্রতিপক্ষ ডাকাত দলের সরদার বাবলা নিহত হন। এক মাস আগে বালু উত্তোলনে বাধা দিতে গিয়ে গুলিতে নিহত হন আবদুল মান্নান ও হৃদয় আহমেদ নামে আরও দুজন।
এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে গত শুক্রবার জামালপুর গ্রামে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। ক্যাম্প চালুর পর গ্রামবাসী মিষ্টি বিতরণ করলেও,ডাকাত দলের পক্ষ থেকে শনিবার ক্যাম্প সরানোর দাবিতে মানববন্ধন করা হয়।
সোমবার বিকেল ৫টার কিছু পর নয়ন, পিয়াস, রিপন ও আক্তার বাহিনীর ৩০-৪০ জন সদস্য পাঁচ-ছয়টি দ্রুতগতির ইঞ্জিনচালিত ট্রলার নিয়ে ক্যাম্প সংলগ্ন মেঘনা নদীতে মহড়া দেয়। বিষয়টি টের পেয়ে পুলিশ প্রস্তুতি নিলে তারা সরে যায়। তবে কিছুক্ষণ পর আগ্নেয়াস্ত্র, ককটেল, হেলমেট ও বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে ক্যাম্পের দিকে ফিরে আসে এবং একের পর এক গুলি ও ককটেল ছুড়তে থাকে।
পুলিশও আত্মরক্ষায় পাল্টা গুলি চালায়। ডাকাতদের পক্ষ থেকে প্রায় ১০০ রাউন্ড গুলি এবং পুলিশের পক্ষ থেকে ২৪ রাউন্ড গুলি ছোড়া হয়। আধাঘণ্টারও বেশি সময় ধরে চলে উভয় পক্ষের গোলাগুলি। পরে ট্রলারযোগে মতলবের দিকে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, নয়ন, পিয়াস, রিপন ও লালু বাহিনীর ভয়ে এলাকার মানুষ মুখ খুলতে সাহস পান না। কেউ প্রতিবাদ করলে মারধর বা হুমকির শিকার হন। তাদের ভয়ে শতাধিক পরিবার গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছিল। তবে পুলিশের ক্যাম্প চালুর পর অনেকে ফিরে এসেছেন। পুলিশি তৎপরতায় ডাকাতদের কার্যক্রমে বাধা সৃষ্টি হওয়ায় তারা হামলা ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে ক্যাম্প তুলে দিতে চাইছে।
এ বিষয়ে গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার আলম আজাদ জানান, বুধবার বিকেলের অভিযানে দুই শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অংশ নেয়। অভিযানে কাউকে আটক করা যায়নি এবং নদীতেও কাউকে পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ২৫-৩০ জন অজ্ঞাত আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে।
শামীম/আরএআর