মাল্টা চাষে সফলতা, লাভবান হচ্ছেন পিরোজপুরের চাষিরা
এক সময় বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলে চাষ হতো মাল্টা। কিন্তু বর্তমানে ফলটি আর পাহাড়ে সীমাবদ্ধ নেই, দেশের সমতল ভূমিতেও মাল্টার চাষ করে সফলতা পেয়েছেন পিরোজপুরের চাষিরা। উৎপাদন খরচ কম এবং স্বাদ ও ঘ্রাণে অতুলনীয় হওয়ায় জেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে এ ফলটি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পিরোজপুরে উৎপাদিত মাল্টার পুষ্টি ও গুণগত মান আমদানিকৃত মাল্টার চেয়েও বেশি। এছাড়া আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণ অনুকূলে থাকায় কৃষি নির্ভর এ জেলায় রয়েছে মাল্টা চাষের ব্যাপক সম্ভাবনা।
বিজ্ঞাপন
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, আমড়া, পেয়ারার পাশাপাশি এখন মাল্টা চাষেও বেশ সুখ্যাতি অর্জন করেছে পিরোজপুর। চলতি বছরে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় মোট ৪৩০ হেক্টর জমিতে মাল্টার চাষ হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মাল্টা চাষ হয়েছে সদর ও নাজিরপুর উপজেলায়। এবছর ৬ হাজার ২ শত মেট্রিক টন মাল্টা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এখানে চাষ করা হয় বারি মাল্টা-১, যা স্থানীয়ভাবে পরিচিত পয়সা মাল্টা নামে। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার কৃষক সরাসরি এ মাল্টা চাষে জড়িত। তাদের উৎপাদিত মাল্টায় এ বছর প্রায় ৩০ থেকে ৩১ কোটি টাকা আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে।
মাল্টা একটি লাভজনক ফসল হিসেবে পরিচিত। পিরোজপুরের মাটি প্রধানত এটেল, দোআঁশ এবং বেলে ধরনের, যা কৃষিকাজের জন্য উপযোগী। এখানকার উর্বর মাটি ও অনুকূল আবহাওয়া মাল্টা চাষে সহায়তা করে। এ কারণে জেলার মাল্টা খুবই মিষ্টি ও সুস্বাদু হয়। ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ এ ফল দেখতে আকর্ষণীয় সবুজ এবং খেতে সুস্বাদু। অনেকটা লেবুগাছের মতো গাছে ঝুলে থাকা থোকা থোকা মাল্টা শুধু শোভনীয় নয়, বরং স্বাদেও অতুলনীয়।
বিজ্ঞাপন
সদর উপজেলার কৃষক মো. আবু যার বলেন, আমি আগে বিভিন্ন ধরনের ফসল চাষ করতাম। কিন্তু মাল্টা চাষ শুরু করার পর আয় অনেক বেড়েছে। খরচ কম, বাজারে চাহিদাও বেশি। এখন প্রতি মৌসুমে ভালো লাভ করতে পারছি।
নাজিরপুর উপজেলার কৃষক আজিজুল হক বলেন, মাল্টার দাম তুলনামূলক ভালো, আবার ফলনও হচ্ছে প্রচুর। আমাদের গ্রামের অনেক পরিবার এখন মাল্টা চাষে যুক্ত হয়েছে। এতে আমাদের সংসারও চলছে স্বচ্ছলভাবে। সরকার যদি আরও সহযোগিতা করে, তাহলে আমরা মাল্টা বিদেশেও রপ্তানি করতে পারব।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. রেজাউল হাসান বলেন, আমাদের এ বছর ৪৩০ হেক্টর জমিতে মাল্টার আবাদ হয়েছে এবং উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৬ হাজার ২শ মেট্রিক টন। আশা করা যায় সেখানে উন্নীত হতে পারব। পিরোজপুরের আবহাওয়া ও মাটির গুণাগুণ মাল্টা চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী। কৃষকদের আমরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তিগত সহায়তা দিচ্ছি।
শাফিউল মিল্লাত/আরকে