রাত গভীর হলে হঠাৎ ঘুম ভেঙে যায় মিনারা বেগমের। মনে হয় দরজায় টোকা পড়ছে হয়তো ফিরে এসেছে তার প্রিয় সন্তান ইমাম হাসান আলী। কিন্তু দরজা খুললেই বোঝা যায়, তা কেবলই মনের ভুল। টানা ১৩ বছর ধরে এমনই শূন্যতা নিয়েই কাটছে প্রতিটি ভোর।

২০১২ সালের ৫ মার্চ। ঢাকার ফার্মগেট এলাকা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেওয়া হয় হাসানকে। তারপর থেকে তার আর কোনো খোঁজ মেলেনি। ৪ হাজার ৯৮৬ দিন পেরিয়ে গেছে, তবু মায়ের অপেক্ষার প্রহর থামেনি।

আন্তর্জাতিক গুম প্রতিরোধ দিবস উপলক্ষে শনিবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে পঞ্চগড় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে পঞ্চগড়-ঢাকা মহাসড়কের পাশে মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’ মানববন্ধনের আয়োজন করে। সেখানে বুকভাঙা কষ্টের কথা জানান মিনারা বেগম। তিনি বলেন- আমার ছেলে ১৩ বছর ধরে গুম। জানি না সে বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে। যদি আর বেঁচে না থাকে, তবে অন্তত তার হাড়গুলো হলেও আমি ফেরত চাই। আমি অন্তত ওর কবরটা জিয়ারত করতে পারব।

এ সময় তার কণ্ঠ বেশ ভারী হয়ে ওঠে। মিনারা বেগম আরো বলেন, প্রতিদিন ভাবি হয়তো ফিরে আসবে আমার হাসান। কিন্তু দিন যায়, খবর আসে না। বুকের দুধ খাওয়ানো সন্তানকে এভাবে গুম করে রাখার যন্ত্রণা শুধু একজন মা-ই বোঝে।

মানববন্ধনে জুলাই আন্দোলনে গুমের শিকার আল-আমিনের বাবাও উপস্থিত ছিলেন। এ সময় বক্তব্য রাখেন- আল আমিনের বাবা মনু মিয়া, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন পঞ্চগড়ের সাধারণ সম্পাদক আজহারুল ইসলাম জুয়েল, কলেজ শিক্ষক শেখ সাজ্জাদ হোসেন, মানবাধিকার কর্মী ও সিনিয়র সাংবাদিক শহীদুল ইসলাম, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য আব্দুল্লাহ আল মামুন রণি এবং অধিকারের পঞ্চগড় ফোকাল পারসন সাংবাদিক সফিকুল আলম।

বক্তারা অভিযোগ করে বলেন, বিগত সরকারের সময়ে শত শত মানুষকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নিয়ে গুম করা হয়েছে। আজও অনেক বাবা-মা নিখোঁজ সন্তানের খোঁজে দিন গুনছেন। গুমের শিকার প্রত্যেক ব্যক্তিকে দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে এবং জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। পাশাপাশি রাষ্ট্রীয়ভাবে গুমের শিকার পরিবারগুলোকে আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

মানববন্ধন শেষে একটি র‌্যালি বের হয়। র‌্যালিটি শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুরাতন ক্যাম্প এলাকার মিডিয়া হাউজে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।

নুর হাসান/এআরবি