যাত্রীবেশে অটোরিকশা চালককে কুপিয়ে হত্যা, আটক ৩

চাঁদপুরের মতলব দক্ষিণ উপজেলায় যাত্রীবেশে দুর্বৃত্তদের হাতে শাওন সরকার (১৮) নামে এক অটোরিকশা চালক নির্মমভাবে খুন হয়েছেন। ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ।

ঘটনাটি ঘটে বুধবার (৩ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে উপজেলার নারায়ণপুরের বাদামগাছতলা এলাকায়। বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব।

নিহত শাওন উপজেলার উত্তর নলুয়া এলাকার বাসিন্দা ইকবাল সরকারের ছেলে। তিনি তার মা রোকসানা বেগমকে নিয়ে উপজেলা সদরের টিঅ্যান্ডটি এলাকার একটি ভাড়া বাসায় থাকতেন। কিছুদিন আগে তার স্ত্রীর সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদ ঘটে। ভাড়া করা অটোরিকশা চালিয়েই চলত মা-ছেলের সংসার।

স্বজনদের দাবি, উপজেলার নারায়ণপুর ও উত্তর নলুয়া এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে শাওনের টাকার লেনদেন নিয়ে বিরোধ ছিল। এ নিয়ে একাধিকবার কথা-কাটাকাটি হয় এবং শাওনকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। তাদের ধারণা, পূর্বের এ বিরোধের জের ধরেই পরিকল্পিতভাবে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাওনের মা রোকসানা বেগম বলেন, ছেলেডারে পরিকল্পনা কইরা ওরা মাইরালাইছে। ছেলেডা খুন অইল। এহন আমি কী লইয়া বাঁচুম? আমার সব শেষ। ছেলেই ছিল আমার সবকিছু। ছেলের আয়েই সংসারের খরচ চলত। এহন সংসার কে চালাইব? আমার ছেলের হত্যাকারীদের ফাঁসি চাই।

পুলিশ, পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত ৯টার দিকে নারায়ণপুর বাজার এলাকা থেকে মাছুয়াখাল এলাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে কয়েকজন যাত্রীবেশী দুর্বৃত্ত শাওনের অটোরিকশায় ওঠে। বাদামগাছতলা এলাকায় পৌঁছে তারা অটোরিকশা থামিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে শাওনের মাথা, চোখ, মুখ, কপালসহ শরীরের বিভিন্ন অংশে এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে।

শাওনের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা অটোরিকশাটি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। তবে স্থানীয়দের ধাওয়ায় তারা অটোরিকশা ফেলে পালিয়ে যায়। পরে গুরুতর আহত অবস্থায় শাওনকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালেহ আহাম্মদ বলেন, ঘটনার বিষয়ে থানায় হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। শাওনের শরীরের বিভিন্ন অংশে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে এটিকে একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড বলে মনে হচ্ছে।

চাঁদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত কিছু আলামত জব্দ করা হয়েছে। এসব আলামতের সূত্র ধরে প্রাথমিকভাবে জড়িত সন্দেহে তিনজনকে আটক করা হয়েছে। এছাড়া একটি পিকআপ ভ্যানে করে অটোরিকশাটি নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেটিও শনাক্ত করা হয়েছে। অচিরেই সংশ্লিষ্ট অন্যদেরও আইনের আওতায় আনা হবে।

আনোয়ারুল হক/এআরবি