প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন দুই ভাই
সিরাজগঞ্জ পৌরসভাধীন দরগা রোডের মৃত লোলিত মহন পালের দুই সন্তান প্রদীপ কুমার পাল ও নারায়ণ চন্দ্র পাল শেষ বয়সে এসেও দীর্ঘ এক বছর ধরে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। সিরাজগঞ্জ পৌরসভা, উপজেলা ভূমি অফিস, সিরাজগঞ্জ সদর থানা, জেলা প্রশাসক থেকে শুরু করে শেষে আদালতের দ্বারস্থ হলেও নিজেদের জায়গা রক্ষার কোনো সমাধান পাননি তারা।
দুশ্চিন্তা আর আক্ষেপ নিয়েই কেটে যাচ্ছে তাদের প্রতিটি দিন। কারণ একটাই, একটি প্রভাবশালী মহল তাদের বাড়ির সীমানা অতিক্রম করে ও নিয়ম না মেনে বহুতল বিলাসবহুল ভবন নির্মাণ করছে। জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ জেলা শহরে কনফেকশনারির পণ্য ব্যবসায়ী পরাণ ভৌমিক নামে একজনের নেতৃত্বে ১১ জন মিলে এই ভবন নির্মাণের কাজ করছেন।
বিজ্ঞাপন
চলতি বছেরের ৩ ফেব্রুয়ারি ভুক্তভোগী দুই ভাই নকশাবহির্ভূত নির্মাণ বন্ধের অনুরোধ জানিয়ে সিরাজগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসকের কাছে আবেদন করেন। আবেদনটি আমলে নিয়ে পৌরসভার প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম গত ১৯ মার্চ ইমারত নির্মাণ আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে নির্মাণকাজ বন্ধের নির্দেশ দেন। একইভাবে ২৭ মার্চ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী মো. নূরনবী সরকারও কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেন।
সব ঠিকঠাকই ছিল, কিন্তু অদৃশ্য কারণে একই অবস্থায় ১০ এপ্রিল পৌরসভার প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম পুনরায় ওই ভবনের নির্মাণকাজ শুরু করার অনুমোদন দেন। অনুমতিপত্রে উল্লেখ করা হয়, ভবনটির চারপাশে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ এবং রাস্তা থেকে নির্মাণ সামগ্রী সরিয়ে নেওয়ায় অনুমোদিত নকশা মোতাবেক কাজ চালিয়ে যাওয়া যাবে। তবে সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনের চারপাশে নিয়ম অনুযায়ী চার ফুট জায়গা রাখা হয়নি। উল্টো ভুক্তভোগী দুই ভাইয়ের জমির সীমানার ভেতর দিয়েই ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে আগের মতোই।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
প্রথমে সিরাজগঞ্জ পৌরসভা নির্মাণকাজ বন্ধ রাখলেও কয়েকদিন পর কীভাবে আবার অনুমতি দিলো? তার উত্তর মিলছে না কারো কাছ থেকেই।
ভুক্তভোগী প্রদীপ কুমার পাল ঢাকা পোস্টকে বলেন, পৌরসভা থেকে কাজ বন্ধ ছিল। দুই দিন পরে পৌরসভা টাকা খেয়ে আবারও কাজ করার অনুমতি দিয়েছেন। এরপর বাধ্য হয়ে আদালতের সরণাপন্ন হয়েছি। তবুও বিল্ডিং নির্মাণ কাজ চলছেই।
আরেক ভাই নারায়ণ চন্দ্র পাল আক্ষেপ করে ঢাকা পোস্টকে বলেন, একটি বছর ধরে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরতেছি। কেউ আমাদের গুরুত্ব দিচ্ছে না। ওই পক্ষের টাকা আছে, আজ তাই আমরা নিরুপায়।
নির্মাণাধীন ভবনের শেয়ারে থাকা ১১ জনের মধ্যে একজন সিরাজগঞ্জের সম্পা হোটেলের মালিক প্রদীপ কুমার ঘোষ। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি শেয়ারে আছি, তবে যে কোনো কথা আপনি পরান চন্দ্র পালের সঙ্গে বলুন। আমি এসব কিছু জানি না। এদিকে পরান চন্দ্র পালের সঙ্গে কথা বলতে গেলে নির্মিত বিল্ডিং এলাকার আশপাশে তাকে পাওয়া যায়নি। ব্যক্তিগত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলে সেটিও বন্ধ পাওয়া যায়।
সিরাজগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক (ভারপ্রাপ্ত) গণপতি রায়কে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি। এরপর সিরাজগঞ্জ পৌরসভার পৌর নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এই বিষয়ে আমি বক্তব্য দেবো না। এখন আদালতে মামলা হয়েছে, বিষয়টি আদালত দেখবেন। কাজ বন্ধ করে দিলেন, কয়েকদিন পরে আবারও নির্মাণকাজের অনুমতি দেওয়া হলো কেনো? এমন প্রশ্নের জবাবেও এই প্রতিবেদকের কাছে কোনো মন্তব্য করেননি এই কর্মকর্তা।
সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফিফান নজমু ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার কাছে একটি অভিযোগ এসেছিল। আমি তাদের গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তরে যোগাযোগ করতে বলেছিলাম।
এদিকে গণপূর্ত প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহমাদুল হাসানকে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এক দপ্তর থেকে অন্য দপ্তরে যেভাবে সাংবাদিককে যোগাযোগ করতে বলা হচ্ছে, ঠিক তেমনিভাবেই ওই ভুক্তভোগীদেরও ভিন্ন ভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে। এদিকে কোনো বাধা ছাড়ায় সময়ের সঙ্গে বহুতল ভবনটির নির্মাণকাজ চলমান রয়েছে।
মো. নাজমুল হাসান/এএমকে