ঠাকুরগাঁওয়ের ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোতে জনবল সংকট, স্বাস্থ্যকর্মী অনুপস্থিতি ও দীর্ঘদিনের ওষুধের ঘাটতির কারণে কার্যক্রম প্রায় অচল হয়ে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা সেবা না থাকায় সাধারণ মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। ফলে সরকারি স্বাস্থ্যসেবার ওপর নির্ভরশীল প্রান্তিক জনগোষ্ঠী চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন।

সদর উপজেলার আকচা ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বাইরে-ভেতরে নীরবতা। নেই কোনো রোগী কিংবা স্বাস্থ্যকর্মীর উপস্থিতি। দাঁড়িয়ে আছে শুধু একটি ভবন ও কিছু আসবাবপত্র। একমাত্র আয়া জান্নাতুন ফেরদৌস শিল্পী নিয়মিত দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি জানান, ২০২৪ সালের অক্টোবর মাস থেকে এখানে উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। নেই পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকাও।

একই পরিস্থিতি বিরাজ করছে রায়পুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে। প্রায় দুই বছর আগে এখানকার উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার অবসরে গেছেন। কিন্তু নতুন কেউ আর আসেনি। অন্যান্য পদও শূন্য। আয়া একাই নামমাত্র দায়িত্ব পালন করছেন।

পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কেন্দ্র রয়েছে মোট ৪৬টি। এর মধ্যে ২৮টি উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পদে ১৭টি, ৬৬টি পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা পদে ৩৫টি, ৫২টি পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শক পদে ৬টি, ৪১টি নিরাপত্তা প্রহরী পদে ১৮টি, ৫১টি আয়া পদে ৩৪টি পদশূন্য রয়েছে। অর্থাৎ অনুমোদিত পদ থাকা সত্ত্বেও অর্ধেকের বেশি পদ শূন্য আছে। ফলে কার্যত স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে।

আয়া খালেদা বেগম বলেন, ‘আমরা নিয়মিত আসি। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মী না থাকায় মানুষ চিকিৎসা নিতে আসে না। শুধু নামমাত্র দায়িত্ব পালন করেই পার হয়ে যায় সময়।

এদিকে জনবল সংকটের পাশাপাশি ওষুধ সংকটও পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলেছে। দীর্ঘ এক বছর ধরে এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কোনো ওষুধ সরবরাহ নেই। এ কারণে রোগীরা চিকিৎসার জন্য এখানে আর আসেন না। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, এখানে স্বাস্থ্যকর্মী নেই, ওষুধ নেই। অসুস্থ হলে বাধ্য হয়ে শহরে যেতে হয়।

আকচা ইউনিয়নের এক বাসিন্দা বলেন, দীর্ঘদিন ধরে স্বাস্থ্য কর্মী নেই। আমরা অনেক ভোগান্তিতে পড়েছি। সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।’ একই ইউনিয়নের আরেক ব্যক্তি বলেন, অনেক দিন ধরে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ওষুধ নেই। আমরা গরিব মানুষ। এখানেই ফ্রি ওষুধ পেতাম। কিন্তু এখন সেই সেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছি।

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে উপপরিচালক মো. শামসুদ্দীন মোল্লার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো তথ্য না দিয়ে এড়িয়ে যান। পরে বারবার যোগাযগের পর ‘তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করে তথ্য চাওয়ার পরামর্শ দেন।

ঠাকুরগাঁও পরিবারপরিকল্পনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, জেলায় প্রায় ৫০ শতাংশ জনবল সংকট রয়েছে। ইতোমধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। নিয়োগ সম্পন্ন হলে সমস্যা সমাধান হবে। এ ছাড়া ওষুধ সংকটও রয়েছে। তবে আশা করছি, দ্রুতই এ সংকট কেটে যাবে।

রেদওয়ান মিলন/আরকে