মৌসুম শুরু হলেও মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ
মৌসুম শুরু হলেও ভোলার মেঘনা-তেতুলীয়া নদীতে জেলেদের জালে মিলছে না কাঙ্ক্ষিত ইলিশ। দিনরাত নদীতে জাল ফেলে ইলিশ না পেয়ে হতাশা নিয়ে ঘাটে ফিরছেন জেলেরা। এতে অনেকটা ইলিশ শূন্য হয়ে পড়েছে জেলার মাছঘাটগুলো। গত বছর এই সময়ে ঘাটগুলোতে হাঁক-ডাক দিয়ে ইলিশ বেচাকেনায় উৎফুল্ল ছিলেন ক্রেতা-বিক্রেতারা।
একদিকে করোনা মহামারি অন্যদিকে নদীতে ইলিশ নেই, এমন পরিস্থিতি ভাবিয়ে তুলেছে জেলে সম্প্রদায়কে। দু’বেলা দু’মুঠো খাবার কেনার টাকা না থাকায় ও ঋণের টাকার জন্য এনজিওকর্মীদের চাপে অনেক জেলে পেশা বদলের চিন্তা করছেন। সবকিছু মিলয়ে খুব একটা ভালো সময় যাচ্ছে না ভোলার মেঘনা আর তেতুলিয়া নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করা জেলেদের।
বিজ্ঞাপন
মো. রইজল মাঝি। ভোলার দৌলতখান উপজেলার মদনপুর ইউনিয়নে বাড়ি। ছোটবেলা থেকেই মেঘনায় মাছ ধরেন। সারা বছর যেমনই যাক, অন্তত ইলিশ মৌসুমে ভালো থাকবেন আশা ছিল। কিন্তু মৌসুমের শুরুতেই নদীতে ইলিশ না থাকায় সংসার নিয়ে চিন্তা বেড়েছে তার। কাঙ্ক্ষিত মাছ না পাওয়ায় সন্তানদের মুখে খাবারও তুলে দিতে পারছে না। তাই ক্ষোভ আর কষ্ট নিয়ে পেশা বদলের চিন্তা এখন তার মাথায়। তিনি বলেন, বাপুরে বাপ দাদায় থাকতে এই পেশার সঙ্গে আছি। তেল পুইরা গাঙ্গে যাই, মাছ পাই না। তেলের টাকাডাও ওডে না। আর অন্যকোনো কাম ও পারি না যে করমু।
বিজ্ঞাপন
শুধু রইজল মাঝি নয়, মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীবেষ্টিত দ্বীপ জেলা ভোলায় অন্তত দুই থেকে আড়াই লাখ জেলে একই কষ্ট ও শঙ্কায় রয়েছেন। তাদের সবার মধ্যেই এখন হাহাকার চলছে। জেলেরা নদী থেকে প্রায় শূন্য হাতে আসায় খালি পড়ে আছে আড়তগুলো। কেউ কেউ ২/৪টা জাটকা নিয়ে ঘাটে ফিরলেও উঠছে না তেলের খরচ, সংসার চালাবেন কীভাবে সে চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
জানা যায়, জেলায় ১ লাখ ৩০ হাজার জেলে সরকারিভাবে নিবন্ধিত থাকলেও বেসরকারি হিসেবে সে সংখ্যা অন্তত ২ থেকে আড়াই লাখ।
নদীতে ইলিশ না থাকার কথা স্বীকার করে ভোলার সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, এই সময়টায় অনেক বৃষ্টিপাত হয় এবং উজান থেকে বৃষ্টির পানির একটা ঢল নেমে আসে। তাতে আমাদের নদীর পানিও সমুদ্রে নেমে যায়। এ বছর বৃষ্টি কম হওয়ার কারণে নদীতে বৃষ্টি পানির পরিমাণ কম থাকায় জোয়ারের সময় সমুদ্রের লবণাক্ত পানি উপরের দিকে উঠে আসছে। ফলে ভোলা জেলার সব নদনদীর পানিতে লবণাক্ততা বেড়েছে। তাই নদীতে ইলিশ কম। তাছাড়া বেশিরভাগ ইলিশ সমুদ্র থেকে আসে। সমুদ্রে বর্তমানে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকায় সেখানে ইলিশের অবাধ বিচরণের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
তিনি আরো জানান, আষাঢ়ের বৃষ্টি এবং আবহাওয়া ইলিশের জন্য উপযোগী। ভোলায় বেশ কিছুদিন ধরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। নদীতে নতুন পানি প্রবেশ করছে। নদীর লোনা পানি কেটে গিয়ে মিষ্টি পানিতে পরিণত হচ্ছে। আষাঢ়ের এ বৃষ্টিতেই ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশাবাদী মৎস্য বিভাগের এই কর্মকর্তা।
জেডএস