বিদেশে পাচার ও পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করায় যুবকের যাবজ্জীবন
ফরিদপুরের নগরকান্দায় ষষ্ঠ শ্রেণির এক কিশোরীকে অপহরণ করে বিদেশে পাচার ও জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করায় এক যুবককে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় আরও একজনকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে ফরিদপুরের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) শামীমা পারভীন এ রায় ঘোষণা করেন।
বিজ্ঞাপন
মানবপাচার আইনে অভিযুক্ত রামপদ বিশ্বাসকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের পাশাপাশি ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে, সাত বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পিকুল মোল্লাকেও ৫ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জরিমানার টাকা অনাদায়ে দুই আসামিকেই এক বছর করে বিনাশ্রম কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে। রায় ঘোষণার সময় পিকুল মোল্লা আদালতে উপস্থিত ছিলেন। অন্য আসামি রামপদ পলাতক রয়েছেন। আদালত তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালের ৬ জানুয়ারি নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের বিলগোবিন্দপুর গ্রামের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে ফুসলিয়ে অপহরণ করে রামপদ পাল ও তার চার-পাঁচজনের একটি দল। রামপদ পাল এলাকায় কবিরাজি চিকিৎসা করতেন। সে কারণে ওই পরিবারের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। এই সুযোগে তিনি ওই কিশোরীকে অপহরণ করেন।
বিজ্ঞাপন
আরও পড়ুন
ঘটনার দুই দিন পর, ২০১১ সালের ৮ জানুয়ারি ভুক্তভোগীর বাবা বাদী হয়ে নগরকান্দা থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। মামলায় তালমা ইউনিয়নের গহেরপুর গ্রামের রামপদ পাল (৭৯), সুবল বিশ্বাস (৪৫), পিকুল মোল্লা (৪৪), পরু বিশ্বাস (৫৮) এবং সালথা উপজেলা সদরের নির্মল বিশ্বাসকে আসামি করা হয়।
ওই বছরের ৩১ মার্চ মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা নগরকান্দা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) তোতা মিয়া তদন্ত শেষে রামপদ বিশ্বাস ও পিকুল মোল্লার বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অন্যদের সম্পৃক্ততা না পাওয়ায় অব্যহতি দেন। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণ ও শুনানি শেষে আজ রায় ঘোষণা করা হলো।
আদালতের রায়ে বলা হয়, কিশোরীকে জোরপূর্বক অপহরণ করে বিদেশে (ভারত) পাচার ও পতিতাবৃত্তিতে বাধ্য করা হয়েছিল। এটি মানবপাচার ও নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইনের গুরুতর অপরাধ। অপরাধের ভয়াবহতা বিবেচনা করে মূল অভিযুক্ত রামপদ বিশ্বাসকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপর এক আসামি পিকুল মোল্লাকে দেওয়া হয় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড। তবে মামলার অন্য আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) গোলাম রাব্বানী ভূঁইয়া বলেন, এই রায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ও মানবপাচার প্রতিরোধে একটি নজির হয়ে থাকবে। এতে সমাজে বার্তা যাবে—এ ধরনের জঘন্য অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও এই পরিবারটি ন্যায়বিচার পেয়েছে।
জহির হোসেন/এএমকে